মনের জন্য ক্ষণিকের বিরতি

আপডেট: জুলাই ২৭, ২০২৩
0

ডা জাকারিয়া চৌধুরী

শ্বেত শুভ্র আকাশ অধীর হয়ে অপেক্ষায় থাকে যার,
কবিতা লেখার জন্যে এতো এতো কাগজের –
আর কি দরকার তার?

যে দেশে আছে প্রমত্তা পদ্মা আর ধীরে বহমান মেঘনা,
নিরাশার বীজ তোমরা কেউ এখনই বুনো না।

তোমরা কি জানো, যেখানে সব কিছুই চলে অতি অতি–
সেখানে কিছুটা সময় জিরিয়ে নিও-
মনকে বলো- ও মন, বয়স তো কম হলো না,
মনকে দিও ক্ষনিকের বিরতি।

যে গৃহে অসতীর স্বামী অসভ্য ক্ষমতাবান,
জ্ঞানীর কদর কাগজের নৌকায় ভাসমান,
সেখানেও তুমি জেনেশুনে যেও,
যদি যুগ যুগান্তর সময় অবধি সয়ে যেতে পারো,
যদি করো নিরব অভিমান, তখনো বাকি রবে যেনো-
নিরঙ্কুশ এবং দলগত অপমান।
ভাবছো, জেনেশুনে এমন হেমলক কেন করবে পান?
আমি বলি, উত্তর আছে এর আছে ঢের সম্মান।
কারন তুমি উজান, তুমি সুপথের যোদ্ধা তুমি মহাপ্রান।
তুমি যুগসন্ধিক্ষনের কবি।
তুমিই জানো যুদ্ধটা কোথায় কখন কত সময়জুড়ে হয়েছিল,
তুমি হয়তো কিছুটা নির্বোধ কবি,
সত্য নিয়ে একাকী যুদ্ধ করেছো।
তুমি হয়তো জানতে না-
সত্যকে সত্য বলতেও আজকের বাজারে সার্টিফিকেট লাগে।
পঞ্চগর্ভা বেশ্যায় ভরা সময় ও সমাজের বিরুদ্ধে,
কাল-সময়- লগ্ন-আফিম এবং গুমে ভরপুর কফিনের বিরুদ্ধে,
বুড়িগঙ্গা -শীতলক্ষ্যার মোহনা সেচে খুজে পেতে চেয়েছিলে-
লক্ষ কংকালের স্তুপ।
দেশের বরেন্য ভাড়ের দল বুদ্ধিজীবীরা সকলেই ছিল-
মেডেল আর মডেলের লোভে সকলেই ছিল চুপ।
যুদ্ধে যদি টিকে থাকতে না-ই পারো,
যুদ্ধের মাঠে যদি প্রতিবারই হারো,
আমি তবে বলি-
কবি, তুমি আকাশেই না হয় কবিতা লেখো,
অবিরাম যুদ্ধ-বিগ্রহ, শঠতা এবং লুন্ঠনের কথা সব,
ইথারেই তুলে রাখো।
হাজার বছর পরে যদি কেউ ইতিহাসের খোজে আসে,
এই পোড়া দেশে,

যদি তুমিই আবার জন্ম নাও রুপালী ইলিশের বেশে,
অথবা যদি কবি হয়ে উঠো হাজার বছর শেষে,
জানি ইথারের সাথে খুব ভাব হবে তোমার,
নিজের সাথে নিজের আগের জনমের প্রেম হবে।
যদি জাতিস্মর হও-
তবে নিজেই নিজেকে হিংসে করবে,
হাজার বছর আগের কথা ভেবে।
তখন তুমি আকাশের পানেই তাকিয়ে থেকো,
চাতক হয়ো, কবি কিংবা দার্শনিক হয়ো।
আজকের আশাহীন এই সমাজের মত,
নিরাশ না হবার ভ্রান্ত আশারবানী তোমাকে শোনাতে হবে না,
ইতিহাস সকল তোমার মুখস্ত থাকবে।
তোমার জানা থাকবে- সভ্যতা বিলীন করা কত সহজ!
আর সভ্য হয়ে উঠা ? যুদ্ধ ছাড়া একেবারেই অসম্ভব।
যুদ্ধ তাই হবে হয়তো হাজার বছর ধরে।
তারপর-
সব যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে পরে,
মরে যাবে সব প্রান? এমনটা হবেনা হয়তো।
আর যদি এমনই হয় যদি এমনই হতে থাকে,
পৃথিবী তবে শুন্য হবে, প্রানী শুন্য।
ইতিহাস, সাহিত্য কিংবা প্রেম সব বিলীন হবে।

সব শেষেরও আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে।
আজ বৃষ্টিস্নাত রাতের শেষে ভোরের কাছাকাছি এসে-
সাদা পাতার মত আকাশে লেখা এই কবিতা,
এই ইতিহাস-
ধারাবাহিক ভাবে সর্বক্ষেত্রে পরাজিত এক কবির ছন্দহীন কবিতা,
সমাজের সর্বগ্রাসী সর্বনাশের পথ মাড়াবে না,
এসবের প্রয়োজন শেষ হবে যুদ্ধের পথ ধরে।
আর যদি তুমি মৌলিক কবি হয়েই জন্ম নাও,
যদি একাই যুদ্ধ করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠো,
যদি ঢেলে সাজাতে চাও সকল রক্তকরবী,
বৃষ্টিস্নাত বেলী ভেজা কোন বরষার সন্ধ্যা,
যদি প্রেমিক হয়ে উঠো,
যদি বকুলেই ব্যাকুল হও তবে,
সকল স্বাধীনতার একমাত্র দাবীদার হতে পারো শুধু তুমি।

নতুন পৃথিবীতে তুমি হতে পারো প্রথম পুরুষ,
বদলে যাওয়া পৃথিবীর আদিমতম কবি।
তখন তুমি আমার সংকলন নিও,
যদি তার প্রয়োজন বোধ করো।

যদি কোনও কিছুরই প্রয়োজন না পরে,
আমার কথাগুলো সব যেমন আছে তেমনই রেখে দিও।
মনে রেখো, বর্নের ব্যাবহার কখনোই সহজ ছিল না।
শ্বেত শুভ্র আকাশও সকলের অপেক্ষায়,
হাসিমাখা চিত্তে অপেক্ষায় ছিলো না।
অযোগ্যের স্থান কখনোই যোগ্য পাত্রে ছিল না-
তারা হয়তো মুঠিবদ্ধ শক্তি ছিল।

কালেভদ্রে যোগ্যেরা কাঠের পুতুল কিংবা,
কাগুজে দাম্পত্যেই সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য ছিল।
তবু যুদ্ধ প্রান্তে একমাত্র তাদেরই সগর্ব উপস্থিতি ছিল।
একজন কবি যখন যোদ্ধা হয়ে উঠেন-
কনকের বিশালতা বুকে ধরেই উঠেন।
তখন তার হাতে অস্ত্র বলতে থাকে হয়তো একখানা পেন্সিল-
আর গোপন এক চিলতে আকাশ।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক দেশ জনতা ডটকম