মহিলা পরিষদের ত্রয়োদশ জাতীয় পরিষদ সম্মেলনের ২য় কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত

আপডেট: ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
0

পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর সম-অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ সকাল ৯:৩০ টায় বি এম এ ভবন, তোপখানা রোড,ঢাকাতে- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ত্রয়োদশ জাতীয় পরিষদ সম্মেলনের ২য় কর্ম অধিবেশন ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ২য় কর্ম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ডা. ফওজিয়া মোসলেম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি হুমায়রা খাতুন। ২য় কর্ম অধিবেশন শেষে জাতীয় পরিষদ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি লক্ষী চক্রবর্তী। সভায় ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধনীয় বিষয়ক আলোচনা করেন সংগঠনের দিনাজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম। সাধারণ প্রস্তাব পাঠ করেন পরিবেশ সম্পাদক পারভীন ইসলাম। নতুন কমিটির সদস্যবৃন্দের নাম উপস্থাপন করেন সহ সভাপতি লক্ষী চক্রবর্তী। এই কমিটির মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে ডা. ফওজিয়া মোসলেমকে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মালেকা বানুকে উল্লেখ করে ৩জন উপদেষ্টা, ১৫জন সহ-সভাপতি,১৭ জন সম্পাদকমন্ডলী এবং ৫২ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যসহ মোট ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করেন তিনি। সদস্যমন্ডলীর নাম উপস্থাপন শেষে নতুন কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কমিটিরি সদস্যমন্ডলীকে শপথ পাঠ করান সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস রতœা। সমাপনী অনুষ্ঠানটির সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।
সভার ২য় কর্ম অধিবেশনে ৫টি কমিশন ভিত্তিক দলীয় কাজের সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।

কমিশনভিত্তিক আলোচনার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। তিনি বলেন, ৫টি কমিশন ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে প্রতিটি জেলার কাজের ক্ষেত্রে ভিন্ন অভিজ্ঞতা, ভিন্ন চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে । আলোচনার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে নারীর অগ্রগতির ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ও ধর্মান্ধতা প্রবল বাধা হিসেবে কাজ করছে; পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর সমমর্যাদা ও সমঅংশীদারিত্ব এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে তিনি বলেন নারী পুরুষের সামাজিকীকরণে যে সকল প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করে যেমন পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকে তাদের করণীয় বিষয়ে ভাবতে হবে; নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও নীতিনির্ধারকদের সাথে এ্যডভোকেসি করতে হবে, কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে এ্যডভোকেসি করার আগে ওই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্টদের মতামত, অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ নিয়ে এ্যডভোকেসি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে; কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ করতে ও আইন সংস্কারের আন্দোলনে তরুণদের যুক্ত করতে হবে। নারীর প্রতি সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে প্রতি জেলায় পাঠচক্র গড়ে তুলতে হবে এবং তরুণপ্রজন্মকে পাঠচক্র এর মধ্যে যুক্ত করতে হবে।

সমাপনী অধিবেশনে নতুন সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, নারীর উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সকলে মিলে সমন্বয় করে কাজ করলে আশা করি আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।
নতুন সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, কর্মসূচির বাস্তবায়নে চিন্তা ভাবনার জায়গায় কেন্দ্রের সাথে জেলার অনেকাংশেই মিল রয়েছে। এটি সংগঠনের ৫০ বছরের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক। গণতান্ত্রিক, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে সকলে নিজ স্বাচ্ছন্দ্যমত বসবাস করতে পারে। এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে যা কিছু করণীয় তা কমিশন ভিত্তিক আলোচনা ও সুপারিশের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন একুশ শতকে মানুষের কমিউনিটির সাথে যোগাযোগের ধরণ বদলেছে। নারী আন্দোলনকে সফল করতে হলে লক্ষ্য স্থির করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে সকলকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে, প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রকে আরো কিভাবে কাঠামোবদ্ধ করা যায় তা দেখতে হবে এবং কর্মসূচিগুলোর নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে। সংগঠনের নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যারা ছিলেন তাদের হারিয়েছি কিন্ত সংগঠনের কাজ থামেনি, কারণ তারা যৌথ নেতৃত্ব তৈরি করতে পেরেছিলেন। এটা আমাদের করতে হবে। সংগঠনের আদর্শের সাথে ও কর্মপদ্ধতির সাথে মিল রেখে দক্ষতার সাথে, সততার সাথে কাজ করার জন্য উপস্থিত কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি লক্ষী চক্রবর্তী বলেন, সংগঠনের ৫২ বছরের পথচলায় আমাদেও অনেক অর্জন আছে, অপ্রাপ্তি ও আছে। ১৯৭২ এর সংবিধান থাকলে আমাদের এত অপ্রাপ্তি থাকত না, দাবি থাকত না। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আন্দোলনমুখী সংগঠন। সাংগঠনিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করতে হলে তৃণমূল ও কেন্দ্রের সাংগঠনিক আন্ত:সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা রোধে প্রাথমিক থেকে উচ্চ স্তরের ছাত্রদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। নারীর অধিকার আদায়ে মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের কঠিন সংগ্রাম নারী আন্দোলন কর্মীদের অনুপ্রেরণার উৎস্য। তাদের অনুসরণ করে পথ চলার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

জাতীয় সমে¥লনের সমাপনী অনুষ্ঠানে মোট কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন ৪৮০ জন। উল্লেখ থাকে যে, করোনা পরিস্থিতির কারণে আগতদের সংখ্যা সীমিত রাখা হয়।