মহিলা পরিষদ ঢাকা মহানগর কমিটির ‘নারী নেতৃত্বের বিকাশ ও সমতাপূর্ণ ভবিষ্যত গড়ার অঙ্গীকার’ বিষয়ক অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত

আপডেট: মার্চ ১৩, ২০২১
0

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে
আজ শনিবার বিকেলে ‘নারী নেতৃত্বের বিকাশ ও সমতাপূর্ণ ভবিষ্যত গড়ার অঙ্গীকার’ বিষয়ক অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহাতাবুন নেসা।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারন সম্পাদক রেহানা ইউনূস। বিষয় ভিত্তিক কর্মসূচী উপস্থাপন করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর। আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির কমিটির সহ সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা; তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিয়া আফরিন সুলতানা আফরিন, আইএসটিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোঃ সাজিদ রুবেল এবং সোশাল এক্টিভিস্ট আবদুল হান্নান।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস সকলকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে এবারের ৮ই মার্চের প্রতিপাদ্য সহ মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন। তিনি বলেন নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারীর অগ্রগতি হলেও বৈষম্য দূর করে নারীর মর্যাদা এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। নারীর প্রতি সহিংসতা আছে, কর্মক্ষেত্র এখনো নারী বান্ধব নয়। এর পেছনে বিদ্যমান কারণগুলোর জন্য পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোকে দায়ী করেন এবং এর নির্মূলের জন্য আহ্বান জানান।

সভায় আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর,এসময় তিনি মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠায় জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। নতুন প্রজন্ম নারী পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে এমন প্রত্যাশা রেখে তিনি বক্তব্য শেষ করেন।

সভায় বক্তারা বলেন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আলোচনার সূচনা প্রথম করে সংগঠন। পরবর্তীতে দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের পদক্ষেপ গ্রহণ গৃহীত হয়। নারীর সমতা তৈরির জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা সকলের সামনে উঠে আসছে প্রত্যেক বছরের ৮ ই মার্চের স্লোগানের মাধ্যমে। নারীরা অনেক জায়গায় আছে কিন্তু নেতৃত্বে কতদূর এগিয়েছে তা দেখার সময় এসেছে। ঘরে-বাইরে নারীরা কাজের মূল্যায়ন পায় না। তাদের মর্যাদা দেয়া হয় না। পরিবার থেকে নারীদের অবদমন করা শুরু হয়। লড়াই -সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যতটা সমতা নারীর জন্য অর্জিত হয়েছিলো তা করোনা মহামারীতে অনেকটাই তলিয়ে যেতে বসেছে। অনেক নারী কাজ হারিয়েছে। সমাজ এখনো কর্পোরেট নারীদের বাঁকা চোখে দেখে, নারীদের নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি করা না হলে পরিবার, সমাজ সমর্থন না করলে নারী নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীবান্ধব নানা পদক্ষেপের কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও বাস্তবে নারীরা বৈষম্যের শিকার। তবে নারীরা পিছিয়ে নেই , প্রযুক্তিতে এগিয়েছে। পাশাপাশি বক্তারা বলেন সমতাপূর্ণ বিশ্ব গড়তে হলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বত্র নারী নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠায় এখনো অনেক গ্যাপ আছে। তরুণদের দেয়া নির্দেশনাগুলো নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। পরিবার থেকে নারীবান্ধব প্যারেন্টিং শুরু করতে হবে, নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ছেলে-মেয়েকে সমান সুযোগ দিতে হবে, নারী বিদ্বেষী মনোভাব দূর করতে হবে, পরিবার বদলালে সমাজ বদলাবে, দেশ ও রাষ্ট্র বদলাবে। বক্তারা আরো বলেন সমন্বিত এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক নারী আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে। নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় নারীকেও এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লড়াইয়ে আরো জোর দিতে হবে। নারী নেতৃত্বের বিকাশের জন্য পরিবারে, রাষ্ট্রে,পাবলিক প্লেসে এবং কর্মক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ ও সহায়ক প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহাতাবুন নেসার অনুপস্থিতে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা শেষ করেন সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস। এসময় তিনি বলেন নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, পিছিয়ে গেলে হবে না। মহিলা পরিষদ নারীর নারীর প্রতি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় যে আন্দোলন করে যাচ্ছে তার সুফল নিশ্চয় আসবে, এজন্য সকলকে আরো কাজ করতে হবে। আন্দোলনে তিনি নারীদের পাশাপাশি সমমনা পুরুষদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান।