রাজপথে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই—-মির্জা ফখরুল

আপডেট: নভেম্বর ৬, ২০২১
0

বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ‘রাজপথে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নাই’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দ্রব্যমূল্যের উধর্বগতি ও সম্প্রীতি ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ এদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে, অন্যদিকে এখন আবার হঠাত করে একলাফে পার লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিলো ডিজেল-কেরোসিনের দাম। ফলে আরো দ্বিগুন বাড়বে দ্রব্যমূল্য। এখন সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? তাদের তো এখন না খেয়ে অপুষ্টিতে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থা হয়ে গেছে।’’

‘‘ আমরা সব সময় যেটা বলে আসছি, এখনো বলছি- কোনো বিকল্প নাই। একমাত্র পথ হচ্ছে এদেরকে(আওয়ামী লীগ সরকার) সরিয়ে দিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করা, পার্লামেন্ট তৈরি করা। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা সবাই রাজপথে নেমে আসি এবং আমাদের শক্তি দিয়ে, জনগনের শক্তি দিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা জনগনের রাষ্ট্র, জনগনের পার্লামেন্ট, জনগনের সরকার তৈরি করি।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যেহেতু আজকে মানুষ জেগে উঠেছে, কথা বলতে শুরু করেছে, এই যে তারা নিজের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করতে শুরু করেছে, ভোটের কথা বলছে, তাদের অধিকারের কথা বলছে, ভাতের অধিকারের কথা বলছে, স্বাস্থ্য অধিকারের কথা বলছে। সুতরাং সেইখান থেকে জনগনের দৃষ্টি সরিয়ে দিতে হবে।”

‘‘ সেই কাজ তারা শুরু করেছে বিভিন্ন রকম ইস্যু তৈরি করে মানুষের দৃষ্টি ফেরানোর জন্য।”

কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামেনর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তরিকুল ইসলাম স্মৃতি সংসদ’ এই আলোচনা সভা হয়।

২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় মারা যান তরিকুল ইসলাম। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন, খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ছিলেন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গোলোযোগের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ গত ৭ মাসে ৮৪জন নিহত হয়েছে এবং সব তাদের লোক। তারা নিজেরা নিজেরা এখন মারামারি করে। কারণ বিরোধী দল তো নাই।”

‘‘ আজকে তারা লুট করে, নিজেরা মারামারি করে এবং নিজেদের মধ্যেই এই সমস্যা তারা তৈরি করছে। আর মামলা দেয় বিএনপির নামে। আপনারা দেখেছেন দুর্গাপূজার সময়ে কী করেছে? তারা নিজেরা দুর্গা পূজার সময়ে সমস্যা তৈরি করেছে, মন্ডপ ভেঙেছে এবং বিএনপি নেতাদের নাম উল্লেখ করে শত শত, হাজার হাজার লোকের নামে মামলা করেছে এবং অজানা মানুষকে আসামী করেছে।যাকে ধরে মামলা দিয়ে দেয়-এটা তাদের পুরনো স্টাইল।”

তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবন তুলে ধরে তার আদর্শ অনুসরন করার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘কর্মীদের হট্টগোলে মহাসচিব ক্ষুব্ধ’

প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের স্মরণ সভা উপলক্ষে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের নিচতলার মিলনায়তনে সহাস্রাধিক নেতা-কর্মীর উপস্থিতি তিল পরিমান ঠাঁই ছিলো না। নেতৃবৃন্দ যখন বক্তব্য দিচ্ছেন তখন পেছনের দিকে এবং মূল মঞ্চের দুই পাশে কর্মীরা সর্বক্ষন কথা বলতে থাকে। এ নিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বক্তব্য দিতে এসে কর্মীদের কানাঘুষা ও কথা বলা বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু কর্মী সেদিকে কর্ণপাত করছিলো না।

এক পর্য়ায়ে তারা বলেন, ‘‘ কথা শুনতে না চাইলে এই কক্ষের বাইরে চলে যান অথবা আপনারা মাইকে এসে কথা বলেন, আমরা মঞ্চে বসে শুনি।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভাপতির বক্তব্য দেয়ার সময়েও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ডায়াস থেকে তিনি নিজের আসনে বসে পড়েন।

হট্টগোল দেখে মহাসচিব বলেন, ‘‘ সমস্যা হচ্ছে আমরা কেন এরকম সভায় আসি সেটা বোধহয় আমরা নিজেরাও জানে না। এটা একটা স্মরণ সভা এমন একজন নেতা যিনি আমাদের অতীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পথ দেখিয়েছেন এবং সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তার স্মরণ সভায় এসে আমাদেরকে এই সমস্ত সমস্যা সামাধান করতে হয়।”

‘‘ কীভাবে কথা বলবেন। দেখুন এখানে ইয়াং ছেলেরা আছে, তরুনরা আছে। হয় তারা ছাত্র দল, না হয় যুব দল, না হয় স্বেচ্ছাসেবক দল অথবা মহানগরের নতুন কমিটি ছেলেরা। তারা তো এখানে কথা শুনতেই আসেনি। অনেকে বহুবার বলেছেন এখানে। কিন্তু আমরা কেউ কর্ণপাত করছি না। আমাদের এই কান দিয়ে ঢুকে ওই কান দিয়ে বেরিয়ে যায়।”

ডানদিনে হট্টগোলকারীদের দিকে তাঁকিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ ওইথানকার সমস্যাটা কী? ওয়াট ইজ প্রোভলেম দেয়ার। এভাবে আমি কথা বলবো না।”

এই সময়ে দলের সঞ্চালক শামীমুর রহমান মাইকে এসে বলেন, ‘‘ আপনারা চুপ করেন। কেউ কথা বলবেন না। প্লিজ মহাসচিব এখন বক্তব্য রাখবেন। সবাই বসে পড়েন। শান্তু হয়ে বসেন। আমাদের সংগ্রামী মহাসচিব স্যার কথা বলছেন।”

পরে সকলে পিনপতন নিরব হওয়ার পর আবার ডায়াসে আসে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আবারো বলছি আপনারা মিটিং শুনতে আসেন, উনাকে স্মরণ করতে চান তাহলে দয়া করে শান্ত হয়ে থাকেন। তা না হলে আমাদের এখানে থাকার দরকার নাই, কোনো প্রয়োজন নাই।”

‘‘ আমি বলতে চাই, এভাবে কিছু হয় না। বিশেষ করে আমাদের তরুন যুবক, ছাত্র-যুব দল তাদের প্রতি আহবান জানাতে চাই- আসুন আপনারা নিজেরা কিছু জানুন এবং নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। তা না হলে কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে না।”

অনুষ্ঠান শেষ হলে নেতা-কর্মীরা একসাথে বেরুতে গিয়ে ইন্সটিটিউটের মূল গেইটের একটা গ্লাস ভেঙে যায়। কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী সামাদ বলেন, ‘‘ বার বার বলছিলাম, আপনারা আস্তে যান। কেউ কথা শুনছে না। বিএনপির লোকজন এক সঙ্গে বেরুনোর সময়ে এই গ্লাসটি ভেঙে যায়। আমি নিজেও আহত হয়েছি।”

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল, শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুজ্জামান শিমুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান কেন্দ্রীয় নেতা নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জয়ন্তু কুমার কুন্ড, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমূখ নেতারা রাখেন।

অনুষ্ঠানে প্রয়াত তরিকুল ইসলামের ছোট ছেলে বিএনপির সহ-েসাংগঠিনক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর-খুলনার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।