লবণাক্ত জমিতে সবুজ বিপ্লব দেখতে ডুমুরিয়ায় আসলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২১
0

মোঃ আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী, ব্যুরো ঃ
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন; দেশের উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে কৃষি উৎপাদনের সম্ভাবনা অনেক। ইতোমধ্যে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা ধান, ডাল, তরমুজ, আলু, ভুট্টা, বার্লি, সূর্যমুখী, শাকসবজিসহ অনেক ফসলের লবণাক্ততাসহিষ্ণু উন্নত জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। এসব জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উপকূলবর্তী বিপুল এলাকার চাষীদের মধ্যে দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান আছে। চাষিরা এসব ফসলের চাষ করলে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় নতুন করে কৃষিবিপ্লব ঘটবে। এ এলাকার মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়বে। মানুষের জীবনযাত্রার মানের কাঙ্খিত পরিবর্তন হবে।
রবিবার সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ঘেরের আইলে আগাম সীম ও অফসিজন তরমুজ চাষ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ।
কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, দেশের প্রায় ২৫% এলাকা হচ্ছে উপকূলীয় এলাকা। লবণাক্ততার কারণে এ এলাকায় সারা বছরে একটি ফসল হতো। আমন ধান তোলার পর বছরের বাকি সময়টা মাঠের পর মাঠ জমি অলস পড়ে থাকত। এই প্রতিকূল ও বিরূপ পরিবেশে বছরে কীভাবে দুইবার বা তিনবার ফসল চাষ করা যায়- সেলক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে আসছি। ইতোমধ্যে অনেক সাফল্য এসেছে। এটিকে আরো সম্প্রসারিত করা হবে, যাতে এ এলাকায় সারা বছর ধরে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যায়। তিনি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া গ্রামের ঘেরের আইলে অফসিজন শিম এবং কুলবাড়িয়ে গ্রামে ঘেরের আইলে অফসিজন তরমুজ চাষ পরিদর্শন কওে কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন ও তার টিমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেচের পানির সমস্যা দূর করতে খুলনা, বাগেরহাটে ৬০০’র বেশি খাল খনন/পুন:খনন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নায়ায়ণ চন্দ্র চন্দ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব ওয়াহিদা আক্তার, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোঃ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, উপপরিচালক, সাতক্ষীরা মোঃ নুরুল ইসলাম, উপপরিচালক বাগেরহাট, মোঃ সফিকুল ইসলাম, উপপরিচালক, নড়াইল দীপক কুমার রায়, উপপরিচালক উদ্ভিদ সংগনিরোদ কেন্দ্র মোংলা মোহন কুমার ঘোষ, ডিডি, হেড কোয়ার্টার হাসান ওয়ারিসুল কবীর, ক্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি মোঃ মোখলেছুর রহমান, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি মোঃ আলগীর বিশ্বাস, চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ, ডুমুরিয়ায় গাজী এজাজ আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবদুল ওয়াদুদ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শারমিনা পারভীন রুমা, আঃ হালিম, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন, ডুমুরিয়া থানার ওসি মোঃ ওবায়দুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ডুমুরিয়া দক্ষিণাঞ্চলের লবনাক্ত প্রবণ একটি উপজেলা। ২ যুগ আগেও যেখানে ছিল শুধু পানি আর পানি। ডুমুরিয়ার দুঃখ ছিল বিল ডাকাতিয়া। কৃষক কোনদিন কল্পনা করতে পারেনি এই পানির ভিতরে জেগে উঠবে সবুজের সমারহ। আজ কেবল সবুজ নয়। ডুমুরিয়ার কৃষি বাংলাদেশের এখন মডেল। বর্তমানে ২১৬৬০ হেঃ জমিতে বোরো, ১৫৫২৫ হেঃ জমিতে আমন, ৩২০ হেঃ জমিতে আউশ, ৩৬৫০ হেঃ জমিতে রবি সবজি, ২৫৫০ হেঃ জমিতে খরিপ-২, সবজি, ২০২০ হেঃ জমিতে খরিপ-১ সবজি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিগত ২/৩ বছরে ডুমুরিয়ার কৃষিতে যুক্ত হয়েছে অফসিজন তরমুজ, রকমেলন, ত্বিনফল, মাল্টা, বানিজ্যিক থাই পেয়ারা, স্কোয়াশ, ড্রাগন ফলসহ নিত্য নতুন প্রযুক্তি যা ডুমুরিয়ার কৃষিতে এনে দিয়েছে এক অনন্য মাত্রা। কৃষি, কৃষক এবং সম্প্রসারণ কর্মীর মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক এবং কৃষকের অদম্য মনোবলের কারনে এটি সম্ভব হয়েছে। ডুমুরিয়ার ঐতিহ্য চুইঝাল, সাথে আছে ১০ ফুট লম্বা নিউটন কচু, আরও আছে ঘেরের পাড়ে দিগন্ত জুড়া শিম, সামার টমেটো, কুল, আম এবং অন্যান্য সবজি। বর্তমানে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেনের নেতৃত্বে ডুমুরিয়ার কৃষি এক অনন্য উচ্চতায়। ডুমুরিয়ার সবজি যাচ্ছে এখন ইউরোপসহ মধ্যেপ্রাচ্যে। আর এই সৌন্দর্যে সারথী হতে রবিরার ডুমুরিয়ার কৃষি এই সৌন্দর্যে পরিদর্শনে আসেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক।