শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে ছড়ানো বিদ্বেষকারীদের ওপর ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাস্তবায়নে মহিলা পরিষদের আহবান

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
0

শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে ছড়ানো বিদ্বেষকারীদের ওপর ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি মহিলা পরিষদ আহবান জানায়।
আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ; সকাল ১০:৩০ টায় সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হল, জাতীয় প্রেসক্লাব-এ বর্তমানের শিক্ষাপাঠ্যক্রম নিয়ে সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতিতে “বিজ্ঞান ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সমতা ভিত্তিক, শিক্ষা পাঠ্যক্রম বিষয়ক অপ্রপ্রচার বন্ধ হোক” বিষয়ক অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠকে এ আহবান জানানো হয়েছে।

উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ হতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়াই ডাব্লিউ সিএ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির; বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর; গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো: মশিউজ্জামান এবং বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি মফিদুল হক।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষাক্রম নিয়ে ছড়ানো বিভিন্ন অপপ্রচার ও গুজবের ঘটনার অংশবিশেষ উপস্থাপন করে বলা হয় ঘটনাগুলিকে ্অনেক সময় বিচ্ছিন্ন মনে হলেও প্রতিটি ঘটনা সাম্প্রদায়িকতার একই সুঁতোয় বাধা এবং অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সম্প্রীতি ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা। এই অপপ্রচারের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী কারা তা জানা সত্ত্বেও অপরাধীদের স্বরূপ সবার সামনে উন্মোচন করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছেনা বরং অপ্রত্যাশিতভাবেই কোনো আলোচনা ছাড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণ বিঘিœত হচ্ছে। বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত রেখে নুতন পাঠ্যপুস্তকে যে সকল ভুলত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করে দ্রুত পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার আহবান জানানো হয় ।

এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো: মশিউজ্জামান বলেন, মুখস্ত নির্ভর শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে এবারে সৃজনশীল চিন্তনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে ২বছর ব্যাপী গবেষণার পর ২০১৯ এই শিক্ষাক্রমের রুপরেখা প্রণয়ন করা হয়। শিক্ষার্থীদের বৈশিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবারের শিক্ষাক্রমে সমস্যা চিহ্নিত, সমস্যা উত্তরণের উপায়, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করা, বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান দেখানো, সকল নিপীড়িত গাষ্ঠীর মানুষকে মর্যাদা দিতে শেখার মত মানসিক অবস্থা তৈরির জন্য শিক্ষা উপকরণের উপর জোর দেয়া হয়েছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সরকারের প্রতি মৌলবাদী গোষ্ঠীকে কঠোরভাবে দমন করার জোরালো দাবি জানিয়ে বলেন মৌলবাদীদের সাথে সমঝোতা করে বিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাঠ্যক্রম পড়ানো বন্ধ করে দেয়া কোনভাবেই কাম্য নয়। সাধারণ কারিকুলাম নিয়ে যত কথা হয় মাদ্রাসার কারিকুলাম নিয়ে কখনো কথা হয়না। তিনি আরো বলেন বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ধর্মকে নিজ নিজ জায়গায় থাকতে দিতে হবে। ৫ম থেকে-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ পাঠ্যক্রম থাকতে হবে।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন আমাদের মাইন্ডসেট এনালিটিক্যাল না। এর ফলে নানা প্রতিবন্ধকতা আসছে। তিনি এসময় দক্ষ ও যুক্তিশীল মনোভাবের জনগোষ্ঠী তৈরি করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান শিক্ষার উপর, মানবাধিকার শিক্ষার উপর জোর দেয়ার আহ¦ান জানান। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের জেন্ডার সংবেদনশীল মনোভাব তৈরির জন্য জেন্ডার সমতা বিষয়ক প্রশিক্ষনের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী সংহতি প্রকাশ করে বলেন নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপাুরি বাস্তবায়নের আগে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাতে বাধা দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে ছড়ানো বিদ্বেষ কারীদের কন্ট্রোল করতে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাস্তবায়নে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।

বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি মফিদুল হক বলেন, শিক্ষা পাঠ্যক্রম নিয়ে বিতর্ক আসলে অজ্ঞানতার মূল দ্বন্দ্বকে উপস্থাপন করে। সমাজ আজ যে অবস্থানে সেখানে পরিবর্তন নষ্ট করার আয়োজন বন্ধ করতে প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ। সনদের স্বীকৃতি দেয়ার আগে সরকারকে কারিকুলাম পর্যালোচনা করতে হবে। ধর্মশিক্ষাকে একমুখী করতে হবে। খুব শক্তভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনকে লক্ষায়িত করতে হবে।

মডারেটরের বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, শিক্ষাক্রম চাহিদার সাথে বিবেচনায় রেখে সর্বদাই পরিবর্তনশীল। সরকারকে নীতিমালা বাস্তবায়নের উপর জোর দিতে হবে। দৃঢ়ভাবে সমঝোতার ক্ষেত্রে কতটুকু সমঝোতা করা হবে তার কৌশল সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। তিনি বিতর্কিতের ইস্যূকে উপেক্ষা করে শিক্ষাক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

অতিথিদের আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের দিলিপ সরকার, ব্লাষ্টের মাহবুবা আক্তার, বাউসি এর মাহবুবা বেগম, আইন ও শালিস কেন্দ্রের রাখী জামান|

উক্ত গোল টেবিল বৈঠকে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের মধ্যে একশন এইড, দীপ্ত ফাউন্ডেশন, উইমেন ফর উইমেন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, আইন ও শালিস কেন্দ্র, ঢাকা ওয়াইডব্লিউ সি এ অব বাংলাদেশ, কর্মজীবী নারী, নারী মুক্তি সংস্থা, এবং পল্লীমা মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও সংগঠনের কর্মকর্তাসহ প্রায় শতাধিক জন উপস্থিত ছিলেন।