শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্টকে হটাতে রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা

আপডেট: জুলাই ২১, ২০২২
0

পার্লামেন্টে সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে মানতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা। তারা আবার রাজপথে নেমে এসেছেন এবং বলছেন, রনিল আমাদের প্রেসিডেন্ট নন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গতকাল বুধবার শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটে তিনি পেয়েছেন ১৩৪ ভোট। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী দুল্লাস আলাহাপ্পেরুমা পেয়েছেন ৮২ ভোট।

নজিরবিহীন গণবিক্ষোভের জেরে গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে মালদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। পরে সেখান থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকেই ই-মেইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করে যান। এরপর গতকালের নির্বাচনে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট থেকে স্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন।

রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আবার রাস্তায় নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা রনিলের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বুধবার কলম্বোর গোতাগোগামা সাইটে কয়েক শ’ বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছিলেন। গত সপ্তাহে এখানেই তারা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ক্ষমতাচ্যুতির আনন্দ উদযাপন করেছিলেন।

বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, শ্রীলঙ্কার নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের জন্য রনিল বিক্রমাসিংহেও আংশিকভাবে দায়ী। কারণ তিনি গোতাবায়া সরকারের সহযোগী ছিলেন এবং গোতাবায়ার পছন্দের ব্যক্তি।

আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফেডারেশনের নেতা ওয়াসান্থা মুদালিগে গতকাল বিক্ষোভে জড়ো হওয়া জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, সংসদ একজন নতুন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করেছে। তবে সেই প্রেসিডেন্ট আমাদের জন্য নতুন নয়। তিনি জনগণের ম্যান্ডেটে নির্বাচিত হননি।’

ওয়াসান্থা মুদালিগে আরও বলেন, ‘আমরা গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে বিদায় করতে পেরেছি। তিনি প্রায় ৭০ লাখ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু রনিল বিক্রমাসিংহে এখন পেছনের আসন থেকে এসে সেই আসনটি সুরক্ষিত করেছেন। তিনি মোটেও আমাদের প্রেসিডেন্ট নন।’

গতকালের বিক্ষোভে, বৌদ্ধ ভিক্ষু, ক্যাথলিক পাদরি, ছাত্র ও শিল্পীসহ অসংখ্য মানুষ অংশ নিয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজয়ের জন্য শক্তিশালী রাজাপক্ষে পরিবারের সঙ্গে গোপন চুক্তি করার অভিযোগও করেছে।

শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় শিল্পী জগৎ মনুওয়ার্না বলেছেন, ‘রনিল বিক্রমাসিংহের জানা উচিত, রাস্তায় থাকা লক্ষাধিক মানুষ ১৩৪ জনের চেয়ে অনেক বড়।’

বিক্ষোভকারীরা দুল্লাস আলাহাপ্পেরুমাকেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে নারাজ। কারণ অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত শ্রীলঙ্কা সামাল দেওয়ার মতো অভিজ্ঞতা তার নেই।

এর আগে গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা বিক্রমাসিংহের সরকারি বাসভবন দখল করেছিল এবং অগ্নিসংযোগ করেছিল। তারা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনও দখল করেছিল।