সংলাপ নয় রাজপথেই জনগনের দাবীর ফয়সালা হবে —-সংবাদ সম্মেলনে মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মে ৯, ২০২৩
0

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারাদেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। সরকারের কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, দমন, প্রলোভন এই আন্দোলনকে বিভ্রান্ত, বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না। তাই সময় থাকতেই জনগণের মনোভাব বুঝে বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় রাজপথে জনগণের দাবির ফয়সালা করা হবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং ভোটের অধিকার প্রয়োগসহ মুক্ত মত প্রকাশের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। আজকে সেই দেশে, মানুষের সকল অধিকার হরণ করা হচ্ছে। হয়েছে। চলছে দুর্নীতি আর মিথ্যাচারের এক মহোৎসব। দেশে বর্তমানে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় সীমার বাইরে চলে গেছে, বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং চলছে। এর ফলে এসএসসি পরিক্ষার্থীরা অস্বাভাবিক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে, কৃষক সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে বিগত দিনের ন্যায় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের ওপর বিভিন্ন কৌশলে নির্যাতন নিপীড়ন শুরু করেছেন। বিএনপিসহ বিরোধী মতের দলগুলো এবং দেশবাসী এই সরকারের অধীনে নির্বাচন না করা এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, ঠিক সে সময় অবৈধ সরকারের মন্ত্রী এবং শাসকগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যাচার ও অলীক কথা বলছে। জনগণ ইতোমধ্যে এই সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথে রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছে। অবৈধ সরকার আন্দোলন যখন দানা বেঁধে উঠছে ঠিক সেই সময় মামলা হামলা দিয়ে বিরোধীমতকে স্তব্ধ করতে চায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ না করলেও আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর মামলা-হামলা অব্যাহত রেখেছে। গাজীপুরের একটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর মামলা দিয়েছে। একতরফা বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন, বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার, বাসায় বাসায় তল্লাশি করছে- বিষয়টি সিলেট পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না এবং জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে এই অবৈধ সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। এই অবৈধ সরকার দেশের মানুষের ওপরে অত্যাচার নির্যাতন চালানোর জন্য এবং অধিকার হরণের জন্য রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ যথা আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ সর্বশেষ বিচার বিভাগকে এই সরকার দখল করে নিজেদের ইচ্ছামত বিরোধী মতের মানুষ সহ এ দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের উপরে অন্যায় অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ দেশের জনগণের দ্বারা প্রত্যাখিত বর্তমান সংসদকে ব্যবহার করে ইতোমধ্যে মানুষের ভোটের অধিকার স্তব্ধ করে একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার সকল কালাকানুন তৈরি করেছে। শাসন বিভাগকে ব্যবহার করে যখন তখন যেকোনো মানুষকে গ্রেফতার নির্যাতন, হত্যা ও খুন এখন নিত্যদিনের এই অবৈধ সরকারের রুটিনে পরিণত হয়েছে।

মহাসচিব বলেন, ‘সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। সরকার প্রধানের ইচ্ছামত মানুষকে কারাগারে বন্দি রাখা, নির্যাতন করা, বিচার বিভাগের অবৈধ সরকারের নির্দেশে ফরমায়েশি রায় প্রদান করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মামলা-হামলায় কারাগারে প্রেরণ ও সাজা প্রদান করছে। তারই ধারাবাহিকতায় উচ্চ আদালতের জামিন থাকার পরেও জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, খুলনা জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুসহ প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে নিম্ন আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছেন, যা আইনের শাসনের পরিপন্থী বলে জনগণ মনে করেন।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী, যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, বিএনপি নেতা মিয়া নূরুদ্দিন অপু, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহিন, ঢাকা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মুসাব্বিরকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে দীর্ঘ দিন যাবৎ বন্দি করে রেখেছে। এছাড়াও যুবদলের সহ-সভাপতি ইউসুফ বিন কালু, সাবেক সহ-সভাপতি আলী আকবর চুন্নু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি রফিক হাওলাদার, সাবেক কমিশনার হারুন অর রশিদসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে সাবেক বিচারপতি আওয়ামী নেতা শামসুদ্দিন মনিকের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় মাসের পর মাস কারাগারে আটক রেখেছে। বার বার জামিন চেয়ে আবেদন করলেও এই মামলায় তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ইতোমধ্যে সারা দেশে বিএনপিসহ বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের নামে এক লাখ ১১ হাজার ৫৪৩টির অধিক মামলা এই অবৈধ সরকার দায়ের করেছেন। আসামির সংখ্যা প্রায় ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮১ অধিক। তার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুই হাজার ৮৩০ এর অধিক ঢাকাতেই, ১৫ শ’ মামলা ইতোমধ্যে বিরোধী মত ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মুক্ত মতপ্রকাশের মানুষের বিরুদ্ধে করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায় দিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন। পুনরায় নতুন করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, ডা: জোবাইদা রহমানসহ জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মিথ্যা মামলা দিয়ে চার্জ গঠন করে সাজা দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফর জামান বাবর, কাজী সলিমুল হক কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে সাজা দিয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে বিগত দিনের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা নতুন করে শুরু করছে। যেমন- সাতক্ষীরায় সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪৮ জন নেতাকর্মীকে ফরমায়েশি যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। ঈশ্বরদীতেও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোখলেছুর রহমান বাবলু, জাকারিয়া পিন্টুসহ প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মীকে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করে আইন মন্ত্রণালয় মামলার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই সকল হীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সরকার তথা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশে উদ্ভুদ পরিস্থিতির সকল দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।