সবাইকে ফিরিয়ে এনে একত্রিত করে পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে—রওশন এরশাদ

আপডেট: জুলাই ৩, ২০২২
0

যাদের অব্যাহিত দেয়া হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে, সবাইকে নিয়েই পার্টি শক্তিশালী করতে হবে- বেগম রওশন এরশাদ;হাসপাতালে শুয়ে আমি সব খবর নিয়েছি, কিন্তু কেউ আমার খোঁজ নেয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু এরশাদ যেভাবে পার্টিকে উজ্জীবিত করে রেখেছিলেন, এখন তা নেই দাবি করে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেছেন, দল এখন অনেকটাই এলোমেলো অবস্থা। তাই যাদের অব্যাহিত দেয়া হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে, সবাইকে নিয়েই পার্টি শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, কে কি করলো বা কে কি বললো সেদিকে না তাকিয়ে, পার্টির নেতাকর্মীদের যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ এলাকায় দল শক্তিশালী করুন, দেখবেন আপনাকে পায়ে ঠেলে দেয়ার শক্তি কেউ পাবে না।

শনিবার ২ জুলাই দুপুরে রাজধানীর গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে জাতীয় পার্টির আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন বেগম রওশন এরশাদ।

এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলের কে কি করছেন থাইল্যান্ডে হাসপাতালের বেডে শুয়ে সব খবর নিয়েছি, কিন্তু আমার খবর কেউ নেয়নি। অথচ যাদেরকে দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তারাই আমার নিয়মিত খোজ রেখেছেন। মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া প্রার্থনা করেছে।

বেগম এরশাদ বলেন, বড়-ছোট নতুন-পুরাতন সবাইকে লাগবে। দলের বাইরে যারা আছেন বা চলে গেছে তাদেরকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। সবাইকে একত্রিত করা না গেলে পার্টি শক্তিশালী করা যাবে না। আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো। তিনি বলেন, অনেক ভালো ভালো নেতাকর্মী দলের বাইরে আছে, তাদেরকে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দলে আনতে হবে। আগামী দিনে তরুণরাই তো দলের নেতৃত্ব দেবে।

তিনি বলেন, আমি জানি আপনাদের মনে অনেক ব্যথা। কিন্তু সব ব্যথা জয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পাটিকে শক্তিশালী করা না গেলে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ঠেকে থাকা যাবে না। রওশন এরশাদ বলেন, আমরা কি বিএনপির সমকক্ষ হতে পেরেছি, নিশ্চয় না। বিএনপি আছে, জামায়াত আছে, এটা মনে রাখতে হবে। দলকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমকক্ষ করতে না পারলে রাজনীতিতে টিকে থাকা যাবে না।

তিনি বলেন, আবারো চেকআপ শেষে দেশে ফিরে পার্টিকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনে নিজেকে সম্পৃক্ত করবো, যা যা করার দরকার তাই করা হবে। এরশাদ তিলে তিলে এই দলটা গড়েছেন। সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে আমি আসার দিন এতো মানুষ আমাকে যে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তা দেখে আমার দু’চোখে বেয়ে জল আসে।

পল্লীবন্ধুকে স্মরণ করে রওশন এরশাদ বলেন, এরশাদ ওপারে ভালো আছেন। মৃত্যুর আগের রাতে তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহর রসূল আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। সুবাহনাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। সকালে খবর আসে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ নিশ্চয় উনাকে জান্নাতবাসী করবেন। কারণ, তিনি ইসলামের খাদেম করে গেছেন। ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করেছিলেন, পবিত্র শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেন। মসজিদ মন্দিরসহ সব উপাসনালয়ের পানি ও বিদুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন।

সভায় জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ পার্টির শীর্ষনেতাদের উপস্থিত হওয়ার আহবান জানালেও তারা কেউ আসেননি।

বেগম রওশন এরশাদের বক্তব্য শেষে সভায় বক্তারা জাতীয় পার্টিতে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলে অভিযোগ করে জাতীয় পার্টি নেতৃত্ব রওশন এরশাদকে নেয়ার জন্য আহবান জানান। এসময় জাপার সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম মিলন বলেন, পার্টির কর্মীরা আজ অসহায়, তাদের খোঁজ কেউ নেয় না। আপনাকে দলের দায়িত্ব নিতে হবে। পার্টির লাখো কর্মী আপনার অপেক্ষায় আছে।

প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আপনার নামের পাশে এরশাদ আছে। বাংলার মানুষ আপনাকে নেতৃত্বে দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি আজ সংকটাপন্ন। যে লোক কোনদিন জেল খাটেনি, রাজপথে ছিল না, তার কাছে জাতীয় পার্টি নিরাপদ নয়।

সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা বলেন, জাতীয় পার্টিতে শুধুই বিশৃঙ্খলা, দ্বিধাবিভক্তি। কেন্দ্রে শুধু পদ আমদানি হয়। মুরগির মত দলীয় পদ বিক্রি হচ্ছে।

সভায় জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের আজ খুব দুঃসময় চলছে। আপনি যখন অসুস্থ তখন আপনার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করলে, বাধা দেয়া হয়। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। আপনি যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় থাইল্যান্ড যান, তারপরের দিন তারা কক্সবাজারে দলবেঁধে আমোদ ফুর্তি করেছে। কাজী মামুন রওশন এরশাদের জীবদ্দশায় সাদ এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান করে যাওয়ার দাবী জানান।

জাপার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, আজকে যারা আপনার ডাকে সাড়া দেয়নি তারা জাতীয় পার্টি করে না। কাউন্সিলে কথা ছিল, দলীয় পতাকা আপনি ব্যবহার করবেন। সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন আপনি। আপনার পরামর্শে দল পরিচালিত হবে। কোনো কথা রাখা হয়নি।

জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ, প্রেসিডয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা, গফফার বিশ্বাস, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ছাত্র নেতা অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরু,পার্টির যুগ্ম মহাসচিব রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ এমপি, আইডিয়াল কলেজের সাবেক ভিপি মুস্তাকুর রহমান মোস্তাক, শ্রমিক নেতা শাহ আলম তালুকদার, জাপা নেতা মিজানুর রহমান দুলাল, কাজী আশরাফ সিদ্দিকী, মহিবুল কাদের চৌধুরী পিন্টু, মঞ্জরুল হক সাচ্চা, জহির উদ্দিন জহির, মো. ইদ্রিস আলী, মহিলা নেত্রী হাসনা হেনা, শারমিন পারভীন লিজা, রুনা শেখ ও
হাফছা আক্তার প্রমূখ।