সরকার পতনে ‘মরণপণ যুদ্ধে’র প্রস্তুতি নেয়ার মীর্জা ফখরুলের ঘোষনা

আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২৩
0

সরকার হাটানো আন্দোলনে ‘মরণপণ যুদ্ধে’র সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ এবার সেই মরণপণ সংগ্রাম, মরণপণ যুদ্ধ। মরণপণ যুদ্ধ করে এবার আমাদের সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে, এদেরকে সরাতে হবে।”

‘‘ স্বৈরাচারি সরকারকে আরেক ধাক্কা লাগাও… এটা আমরা মন থেকে বলছি, প্রাণ থেকে বলছি, অন্তর থেকে বলছি। আমাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ নাই। আমাদের ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নাই। আমাদের অস্তিত্বের জন্য, জাতির অস্তিত্বের জন্য আজকে আমাদের সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এই ভয়াবহ দানবকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা জনগনের রাষ্ট্র, জনগনের সরকার, জনগনের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। সেটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র চাওয়া।””

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই যে মামলা-মোকাদ্দমা, রায় এই সব কিছু চলে যাবে যেদিন আমরা এই সরকারকে বিদায় করতে পারবো। আসুন আমরা সবাই মনের মধ্যে সেই দৃঢ়তা নিয়ে জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।”

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘ জকে আমাদের নেতা, বাংলাদেশের তারুণ্যের নেতা, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, সাজা দিয়েছে, একজন রাজনৈতিক অত্যন্ত ভদ্র মহিলা এখনো বন্দি আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছে, আমাদের ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দিয়েছে…. এগুলোকে যদি আমাদের অপসারণ করতে হয়, দূর করতে হয় তাহলে একটাই মাত্র পথ। এই সরকারকে সরাতে হবে।”

‘‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব সেজন্য শ্লোগান দিয়েছেন। কি সেই শ্লোগান? দেশ যাবে কোন পথে?”

নেতা-কর্মীরা উচ্চস্বরে বলে ‘ফয়সালা হবে রাজপথে’।

আবার শ্লোগান ধরেন বিএনপি মহাসচিব। ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’, ‘শেখ হাসিনার সরকার নিপাত যাক’।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের ‘ফরমায়েসী’ রায়ের প্রতিবাদে সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশের অংশ হিসেবে এই সমাবেশ হয়।

বৃষ্টির মধ্যেই বিকাল তিনটায় সমাবেশের কার্য্ক্রম শুরু হয়। চারটি ট্রাক একত্রিত করে তৈরি করা হয় অস্থায়ী খোলা মঞ্চ। মঞ্চের বড় ব্যানারে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিশাল আলোকচিত্রের পাশে লেখা ছিলো ‘প্রতিবাদ সমাবেশ-এই মুহুর্তে অন্যায় মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে’।

প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে জুম্মার নামাজের পর বেলা এই সমাবেশ নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমবেত হয়। হয়। সড়কে পানি জমালেও কর্মীরা হাটু পানিতে দাঁড়িয়ে নেতা-কর্মীরা বক্তাদের বক্তব্য শুনেন। নেতারা বৃষ্টিতে ভিসে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে।

নেতা-কর্মীরা ‘এই রায় হাসিনার, এই রায় মানি না’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা এখন যাবি’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়।

প্রাকৃতিক দুযোর্গের মধ্যে সমাবেশে বিপুল নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে তাদেরকে সাদুবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমি জানি আপনারা অনেক কষ্ট করে পরিশ্রম করছেন। এই যে পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন, বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। রাতে ঘুমাতে পারেন না পুলিশ হানা দিচ্ছে।”

‘‘ এরা দিনের বেলা বলবে আমরা তো ভাই সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে চাই, আমরা কারো প্রতি কোনো অন্যায় করছি না। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হয় আর সবাইকে গ্রেফতার করে.. গ্রেফাতার করে, সালাম সাহেব(আবদুস সালাম আজাদ) জামিন নিয়ে বেরুলে আবার জেলগেইট থেকে গ্রেফতার করে। কত ভীরু হলে, কাপুরুষ হলে, ভয় পেলে তারা এটা করতে পারে।”

‘খেলতে চাও ক্ষমতা ছেড়ে আসো’

ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারা বক্তব্যে বলে খেলতে চাও, খেলতে চাও, ডিসেম্বরে খেলতে চাও।”

‘‘ এসব বাদ দিয়ে, ক্ষমতা বাদ দিয়ে, চেয়ারটা ছেড়ে … দয়া করে একটু তাড়াতাড়ি আসো না। আসো।”

‘যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ভারত কি বলেছে এটা বিবেচ্য নয়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি বললো বা যুক্তরাজ্য কি বললো বা ভারত কি বললো…এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নাই। আমাদের দরকার আমাদের জনগন কি বলছে।”

‘‘ আমাদের জনগন পরিস্কার করে বলছে, বিদায় হও। আর সময় নাই। যেতে হবে তোমাকে।এই সরকারকেই যেতেই হবে।”

‘বিচার বিভাগের প্রতি’

বিচার বিভাগের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমি জানি আপনারা সন্তুষ্ট হবে না। একটা কথা মনে রাখবেন আমরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করি। আমাদের কোরআর শরীফে পরিস্কার করে বলা আছে, যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে বিচারকদের। সে যদি ন্যায় বিচার করে, অন্যায়ভাবে কাউকে তারা শাস্তি দান করে সেই বিচারককে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।সব ধর্মেই আছে।”

‘‘ অতীতের কথা স্মরণ করবেন। সেই বৃটিশ আমল থেকে যেদিন পর্যন্ত এদেশের মানুষ ন্যায়ের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন লড়াই করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছে। এদেশের মানুষ সেই পাকিস্তান আমলে আমি ছাত্র ছিলাম তখন আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে তার সরকারের বিরুদ্ধে গান বানিয়েছিলো… বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা। আজকে তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমান উল্লাহ আমানসহ অন্যান্য যাদেরকে আপনারা সাজা দেয়ার জন্য ঠিক করেছেন তাদেরকে সাজা দেয়ার আগে চিন্তা করবেন এদেশের মানুষ আপনাদেরও হিসাব নেবে, জবাবদিহি করতে হবে একদিন।”

সাতক্ষীরার সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে মিথ্যা মামলয় ৭০ বছর কারাদন্ড এবং ঈশ্বর্দীতে আরেক মিথ্যা মামলায় বিএনপির স্থানীয় ৯ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদানের ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘ এভাবে ৭০ বছর সাজা দিয়ে, মৃত্যুদন্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে আপনারা শেষ রক্ষা করতে পারবেন না।”

‘‘ আমরা রাস্তায় নেমেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। আমাদের মানুষজন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছে ঢাকায়… একটা মাত্র উদ্দেশ্যে যে, আমরা এই সরকারের পতন চাই। এই সমাবেশে ওইখানে দেখুন আমার রিকশা শ্রমিকরা দাঁড়িয়ে আছে। তারা চায় এই সরকারের পতন। কারণ তারা এখন আর তাদের পরিবারকে দুই বেলা খাবার তুলে দিতে পারেন না।চাল,ডাল,তেলসহ প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির চিত্রও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আমরা ধারণা হচ্ছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সমাগত। কারণ এই সরকার জানে, যারা জনগনের এই উপস্থিতিতে, জনগনের এই চাপে মুখে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।”

‘‘ যারা রাষ্ট্র চালায় পাগল কুকুরের মতো আমাদের দেশের জনগনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা আমাদের ছেলেদের গ্রেফতার করছে, তারা আমাদের ছেলেদের জেলে পাঠাচ্ছে, সাজা দেয়ার কাজ খুব দ্রুত চালিয়ে যাচ্ছে। যাতে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে না পারে, বিএনপির নেতৃবৃন্দরা যাতে নির্বাচন করতে না পারে সেই ব্যবস্থা তারা করছে। এসব করে কোনো লাভ হবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে এই রায় আমরা মানি না। আমরা ইনশাল্লাহ এটাকে প্রতিহত করব আন্দোলনের মাধ্যমে, আমরা প্রতিহত করবো যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে সেই নিপীড়নকে প্রতিহত করব।”

‘‘ শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার, একটু ধরযের ব্যাপার।”

মহানগর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলহ্বাজ সালাহউদ্দিন আহমেদের উচ্চ আদালত থেকে জামিন প্রাপ্তির পরও তাকে গ্রেফতারের নিন্দা জানান মহানগরের সাবেক সভাপতি আব্বাস।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বাসাবাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর বিভিন্ন কালাকানুন করে মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনকতাকে সরকার হরণ করছে বলে অভিযোগও তুলে ধরেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘ এদেশের ১৮ মানুষ বাঁচবে না, এই দুস্যরা থাকবে এটা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শেখ হাসিনা রাজনীতিকে ধবংস করে যুব সমাজকে ধবংস করে… সে রাষ্ট্রের মালিক হবে আর আমরা প্রজা হয়ে থাকার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনাই। যুদ্ধ একাত্তর সালে শুরু ‍হয়েছে… সেই যুদ্ধ এখনো চলমান। এই যুদ্ধে আমাদের বিজয় হতে হবে।”

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।

অঙ্গসংগঠনের মধ্যে যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, মতস্যজীবী দলের আব্দুল রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমূখ নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেন।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত ‍উল্লাহ বুলু, আহমেদ আহমেদ আজম খান, এজেডেএম জাহিদ হোসেন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরাফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেনসহ কেন্দ্রীয় অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।