সরকার পতনে যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে———মির্জা ফখরুল

আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২৩
0

সরকার পতনে ‘যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে’ বলে সকলকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার দুপুরে এক শিক্ষকদের এক মহাসম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ এখন আমরা যে শাসনের মধ্যে পড়েছি, এখন আমরা যে দুঃশাসনের মধ্যে পড়েছি, এখন যারা আমাদের এই বুকের ওপরে চেপে বসে আমাদের উপরে ছড়ি ঘুরাচ্ছে, মারছে, খুন করছে, হত্যা করছে, লুন্ঠন করছে … এটাকে সরানোর দায়িত্ব কার? এই স্যাংশনের ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে, ভিসানীতি ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে? অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে? আমাদেরকেই করতে হবে।”

‘‘ সেটা করতে এখন ভালো কথা শুনছে না, শান্তির কথা শুনছে না। আমরা বার বার বলছি যে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি.. বলছি, পদযাত্রা করছি, রোড মার্চ করছি, সমাবেশ করছি… তাই না। শুনছে। চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। শোনে না। ওই জন্য এখন করতে হবে? শোনাতে হবে এবং শোনানোর জন্য যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে। সেজন্য আজকে সমগ্র জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য, সকল মানুষকে এই সরকারকে সরাতে রাজপথে সোচ্চার হতে হবে। ইনশাল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো। ”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমি এখনো বলি, এখনো আহ্বান জানাচ্ছি, অনেক কষ্ট দিয়েছেন মানুষকে, অনেক হত্যা করেছেন আমাদের ভাইকে, অনেক স্বামীকে, অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন, অনেক মাকে পুত্রহারা করেছেন, অনেক সন্তানকে পিতা হারা করেছেন, অনেক রক্ত ঝরিয়েছেন। এখনো সময় আছে এখন আপনি মানে মানে দয়া করে বিদায় হোন, বিদায় হোন।”

‘‘ আপনারা যে অপকর্ম করেছেন, এই অপকর্মের জবাবদিহি আপনাদেরকে একসময় করতে হবে। তার আগে স্বসন্মানে যদি বিদায় হতে চান তাহলে এখনই সময়ে আপনি বিদায় হন। আমরা বলেছি, পদত্যাগ করুন, এই সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং স্পষ্ট করে বলেছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।”

বিদেশীরা কেউ বলেনি কেয়ারটেকার সরকারের কথা -গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘ এটা বলতে হয় না… ওটা বুঝা যায় যে এখানে(বাংলাদেশে) নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তার প্রমাণ দিয়েছো ’১৪ সালে, তার প্রমাণ দিয়েছো ’১৮ সালে আর এখনো প্রমাণ দিচ্ছে। আর বলে কিনা নির্বাচন তো সুষ্ঠু করা আমাদের কর্তব্য, সুষ্ঠ করছি।”

‘‘ গতকাল প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, আমাদের নির্বাচন নিয়ে এতো কথা আমি বুঝতে পারি না। নির্বাচন তো আমরা করছি সুন্দর নির্বাচন, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করছি। এখন এই কথাগুলো শুনলে আমি আগেও বলেছি, ঘোড়াও হাসে। উনার সুষ্ঠু নির্বাচন করেন এটা বিস্ময় ব্যাপার। যাই হোক অবৈধভাবে হোক আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো। ১৫ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী আছেন। উনি কি একবারও চিন্তা করেন না যে, আমরা এই কথাটা শুনে মানুষ হাসবে।”

গত কয়েক বছরে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৪৫ লাখ মিথ্যা মামল দায়েরসহ গত এক বছরে রাজপথে ২২ জন নেতাকে গুলি করে হত্যা, ৮ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, লক্ষাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থককে আসামী করা, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় দিয়ে সাজা প্রদান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব।

‘আতঙ্কের ছাপ দেখছেন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ র‌্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছে… ওরা মানুষ খুন করতো, কথায় কথায় গুলি করে মেরে দিতো, গুম করে দিতো….. আর ভিসানীতি করেছে। ভিসানীতিতে এখন সবাই আতঙ্কিত। ওদের যারা দুর্নীতি করেছে, যারা অন্যায় করেছে, যারা বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড করেছে, যারা বিচারক হয়ে দলীয়ভাবে বিচার করছে, যে ব্যবসায়ী চুরি করছে, দুর্নীতি করছে সবাই এখন আতঙ্কিত হয়ে গেছে।”

‘‘ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের ছাপ আমরা দেখতে পারছি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখে। এমনভাবে কথাবার্তা বলছেন যে মনে হয় যে, তার এখন আর ক‘দিন আগে চিফ জাসিস্ট হয়েছিলেন বিচারপতি এটিএম আফজাল তিনি বলেছেন রং হেডড পারসন…রায়ের মধ্যে তিনি লেখে্ছিলেন। সেই রং হেডেড পারসন আরো রং হেডেড হয়ে গেছেন। রং হেডড পারসন যদি আরো রং হেডেড হয় তাকে কি বলে? উন্মাদ। আমাদের একজন খুব মেধাবী ছাত্র সে আপনার একটা কার্টুন পত্রিকা বের করেতো সেটার নামই ছিলো উন্মাদ।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এসব ডিগবাজিতে কোনো লাভ হবে না। ডিগবাজি করে একবার বাইরে যাচ্ছে, ওদিকে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার সময় নাই… এতো কান্না কাটি করার দরকার কি বলেছেন।”

‘‘ আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিকভাবে আপনার সময় হয়ে গেছে। দয়া করে মানে মানে কেটে পড়েন। তা না হলে জনগন আপনাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে।”

রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে চাকুরির জাতীয়করণের দাবিতে ও শিক্ষক-কর্মচারির হয়রানি-নির্যাতনের প্রতিবাদে এইই মহাসম্মেলন হয়। এতে সারা দেশ থেকে সহাস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারি নেতা অংশ গ্রহন করেন।

আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বেগম খালেদা জিয়ার অঙ্গীকার শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে শিক্ষকদের চাকুরিচ্যুত করাসহ তাদের ওপরে নিপীড়ন-নির্যাতন ও কারগারে প্রেরণের ঘটনার সমালোচনা করেন তিনি।

শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও শিক্ষক সমিতির মহাসচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল ম্ইন খান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ মহাসচিব চৌধুরী, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের মহাসচিব মুগিস উদ্দিন মাহমুদসগ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।