সিদ্ধিরগঞ্জে মহাসড়কে অবৈধভাবে চলছে লেগুনা মাসে ৩২ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায়

আপডেট: এপ্রিল ১৮, ২০২২
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে সরকার দলীয় নেতাদের সহায়তায় অবৈধভাবে চলছে লেগুনা, হাইওয়ে পুলিশ নিরব। শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে লেগুনা চলাচল করছে বেপরোয়াভাবে।
মহাসড়কে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করার কথা বলে শিমরাইল এক্সপ্রেস লিমিটেড ও লেগুনা মালিক সমিতির নামে এসব লেগুনা থেকে মাসে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে প্রায় ৩২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
লেগুনা মালিক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত ১৮০টি যাত্রীবাহী লেগুনা চলাচল করছে। প্রতিটি লেগুনা থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ৫শ’ ৭০ টাকা করে।
যার মধ্যে চিটাগাংরোডে লাইনম্যানের জন্য ৩০টাকা, সাইনোবোর্ডে লাইনম্যানের জন্য ২০টাকা, যাত্রাবাড়ীতে লাইনম্যানের জন্য ৭০টাকা আর জিপি চাঁদা ৪শ’ ৫০টাকা। এছাড়াও ষ্টিকার লাগানোর জন্য গাড়িপ্রতি মাসিক চাঁদা ১ হাজার টাকা।
পরিসংখ্যান মতে ষ্টিকারসহ ১৮০ গাড়ি থেকে মাসে চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় ৩২ লাখ ৫৮হাজার টাকা। লাইনে নতুন গাড়ি প্রবেশ করতে হলে সালামি দিতে হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে সালামি বাবদ হাতিয়ে নেয় কমপক্ষে ২০থেকে ২৫ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে মহাসড়কে লেগুনা চলছে শিমরাইল এক্সপ্রেস লিমিটেড (এসইএল) নামক কোম্পানির ব্যানার। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন ওই কোম্পানির এমডি হাসানুজ্জামান পরশ। যাত্রাবাড়ীতে মনগড়া লেগুনা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মোল্লা।
চাঁদা আদায় করছে কাউসার, অনিক, শাহআলম ও নয়ন নামে চারজন। শিমরাইলে হাজী আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেট ও প্রিয়ম টাওয়ার (ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের) সামনে মহাসড়কে করা হয় লেগুনা স্ট্যান্ড। লেগুনার চালক ও হেলপার অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক।
তাদের নেই কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স। বেশিরভাগ গাড়ি লক্কর-ঝক্কর। ঠিক নেই কাগজপত্র। নেই রুট পারমিট। তবু কর্মরত হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের সামন দিয়ে মহাসড়কে দিব্বি চলছে লেগুনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গাড়ি মালিকের অভিযোগ, মাসিক ১ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে গাড়ির সামনে গ্লাসে ষ্টিকার লাগাতে হয়। এটা বাধ্যতামূলক। ষ্টিকার না লাগিয়ে গাড়ি সড়কে চলাচল করতে পারেনা। করলে চালকদের মারধর, গাড়ি ভাংচুর ও আটকিয়ে রাখে সমিতির নেতারা।
শিমরাইল এক্সপ্রেস লিমিটেড এর এমডি হাসানুজ্জামান পরশ বলেন, লাইনম্যানদের জন্য শিমরাইলে ৩০ টাকা ও সাইনোবোর্ডে ২০ টাকা নেওয়া হয়। জিপি ৪শ’ ৫০ টাকা চাঁদা নেয় যাত্রাবাড়ীতে মালিক সমিতি। গাড়ি ১৮০ টি হলেও দৈনিক রাস্তায় চলে প্রায় দেড়শত। তারমধ্যে দৈনিক চারটি গাড়ি থানা পুলিশকে রিকুইজিশন দিতে হয়।
লেগুনা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মোল্লা বলেন, প্রশাসনের লোক ও কথিত সাংবাদিকদের ২০/৩০ত্রিশটি গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি থেকে জিপি নেওয়া হয় অর্ধেক। অনেকে দেয়না। লাইনম্যানদের জন্য কিছু টাকা তুলা হয়।
সমিতির সভাপতি পলাশ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যেসব গাড়ি মালিকরা অভিযোগ জানিয়েছে তাদের আমার সামনে নিয়ে আসেন।
শিমরাইল মোড় ও সাইনবোর্ডে দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশের টিআই (প্রশাসন) সরফুদ্দিন লেগুনা চলাচলের বিষয়ে কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করে শুধু বলেন, আগে যেভাবে চলছে এখনো সেভাবেই আছে।
হাইওয়ে পুলিশের নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অমিত সূত্রধর বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মহাসড়কে লেগুনা চলাচল করতে পারেনা। চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। মহাসড়কে লেগুনা চললে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এম আর কামাল
নারায়ণগঞ্জ
তারিখ ঃ ১৮-০৪-২০২২