সৈয়দপুরে তাল শাঁস বিক্রির ধুম

আপডেট: জুন ১৬, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ

জৈষ্ঠ্যের খরতাপে সারাদেশে বেড়েই চলছে তাপদাহ। দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। তীব্র গরমে হাসফাস অবস্থায় একটু স্বস্তি পেতে কদর বেড়েছে তাল শাঁসের। চারদিকে বাহারি ফলের সমাহার। আম, কাঁঠাল, লিচু, কলার ভিড়ের মধ্যেও তাল শাঁস জায়গা দখল করে নিয়েছে সমান তালে।

তাল শাঁস হচ্ছে পাকা তালের পূর্ববস্থা। এটি এলাকাভিত্তিক তাল শাঁস, তালের আঁটি, কোথাও কোথাও কচি তাল নামেও পরিচিত। এই তাল শাঁস নরম, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও প্রশান্তিদায়ক। অন্যান্য ফল যেখানে ফরমালিনে নীল, সেখানে মানুষদের প্রশান্তি যোগাতে তাল শাঁসে ফরমালিনের ছোঁয়াও লাগেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাল শাঁস অনেক উপকারি একটি ফল। শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতি ১০০ গ্রাম তাল শাঁসে ৮৭ দশমিক ৬ গ্রাম জলীয় অংশ, ৮৭কিলো ক্যালরী, ভিটামিন-সি ৫ মিলিগ্রাম, আমিষ শূন্য দশমিক ৮ গ্রাম, ফাইভার ১ গ্রাম, শর্করা ১০ দশমিক ৯ গ্রাম, লৌহ ১ মিলিগ্রাম, ফ্যাট শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, নিয়াসিন শূন্য দশমিক ৩ মিলিগ্রাম, রিবোফাভিন শূন্য দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম, ক্যালশিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন থায়ামিন শূন্য দশমিক ৪ মিলিগ্রাম ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈয়দপুর শহরের পোস্ট অফিস সংলগ্ন রেল লাইন, কলিম হোটেল মোড়, তামান্না সিনেমা হল মোড়, প্লাজা মার্কেটের সামনে ও রেলওয়ে কারখানা গেট বাজারে বিক্রি হচ্ছে। নীলফামারী শহরের শাহীপাড়ার মোড়ে, কালী তলায়, পৌর সুপার মার্কেটের সামনেও বিক্রি হচ্ছে এ ফল।

এছাড়াও জেলার ডোমার, ডিমলা ও কিশেোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের পাকা রাস্তার ধারে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং বিভিন্ন অলিতে গলিতে ভ্যানে করে ভ্রাম্যমান তাল শাঁস বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।

এ অঞ্চলে তালের চাষ একেবারেই কম। চাহিদা মেঠাতে ব্যবসীয়ারা বরিশাল, নওগাঁ, শান্তাহার, আক্কেলপুর, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসব তাল শাঁস সংগ্রহ করে বিক্রি করছে বাজারে। তীক্ষধার কাটারির (ছোরা-চাকু) আঘাতে শক্ত খোলস থেকে বেরিয়ে আসছে সরস কচি তালের শাঁস।

গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে গলাটা একটু ভেজাতে পথচারীরা ভিড় করছেন তালশাঁস বিক্রেতার কাছে। সুস্বাদু তালশাঁস খেয়ে দিনমজুর থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীরা প্রশান্তির পরশ নিয়ে দূর করছেন তাৎক্ষণিক ক্লান্তি। আবার কেউ কেউ নিজের পরিবারের জন্যও নিয়ে ফিরছেন ঘরে।

তালের শাঁস ব্যবসায়ী মনছুর আলী বলেন, আমাদের এলাকায় তাল গাছ একদম কম। গ্রামেগঞ্জে থেকে বেশী সংগ্রহ করতে পারি না। তাই বাহিরের জেলাগুলো থেকে গাছ চুক্তি করে কিনে আনতে হয়। প্রতিটি বড় গাছে ৩/৪ শ’ আর ছোট গাছে ২/৩ শ’ তাল শাঁস পাওয়া যায়। গাছ চুক্তি করলেও প্রতিটি তাল শাঁস পরিবহনসহ ৫-৬ টাকা খরচ পরে যায়। আর এই তাল শাঁসে ২/৩টি আঁটি থাকে। আমরা এসব তালের আঁটি ৫ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি।

সৈয়দপুর রেল লাইনে তাল শাঁস বিক্রেতা আবুল বাসার বলেন, গ্রামগঞ্জ থেকে তাল সংগ্রহ করতে হয়। তবে আমাদের জেলায় তাল গাছ খুঁজেও পাওয়া যায় না, খুব কম। এসব তাল সংগ্রহ করতে খরচ পরে যায় ৭/১০ টাকা। তালের আঁটি ২/৩টা হওয়ায় পারিশ্রমিক দ্বার হয়। এজন্য তালের মৌসুমে তাল বিক্রি করি আর বাকি সময়টা কৃষি কাজ করে সংসার চালাতে হয়। তবে ভালো লাগে তালের চাহিদা বাজারে খুব।

আরেক ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, গরমের জন্যে তালের শাঁসের চাহিদা বেড়েছে। সারাদিনে তালের শাঁস বিক্রি করলে ৮/৯শ টাকা লাভ হয়।

তাল শাঁস ক্রেতা নুর আলম বর্ণ জানান, এই গরমে তালের আঁটি অনেক স্বুস্বাদু। একটি তাল শাঁস খেলে দীর্ঘক্ষন পানির পিপাসা লাগে না। তাছাড়া অন্যান্য ফলে ফরমালিন দেয়া থাকলেও তালে ফরমালিন মেশানোর কোন বুদ্ধি নাই। তাই তালের আঁটি আমার খুব প্রিয়।

কৃষিবিদরা বলছেন, তাল শাঁস যেমন উপকারী, গাছটাও কম না। বজ্রপাত ঠেকাতে তাল গাছ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। নীলফামারী জেলায় তাল গাছের চাষ খুবই কম। রাস্তার ধারে কিংবা বাড়ীর ফাঁকা জায়গায় তাল লাগানো হলে বজ্রপাত ঠেকানোর পাশাপাশি তাল শাঁস মানব দেহে ব্যাপক উপকারে আসবে। এমনকি অল্প খরচে এ জেলার চাষীদের আয় বৃদ্ধি পাবে।
শাহজাহান আলী মনন,
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি