স্ত্রী হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকে ১৬ বছরেগ্রেফতার করতে সক্ষম র‌্যাব-৩

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২২
0

যৌতুুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে ১৬ বছর যাবৎ পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ উজ্জল প্রামাণিক ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকা হতে র‌্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়েছে।

র‌্যাব-৩ জানায় , বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামী গ্রেফতার করে। যার মধ্যে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর ৩ টি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামী মোঃ হেলাল হোসেনকে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকা থেকে গ্রেফতার, রাজধানীর শাহজাহানপুরের জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং পথচারী কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকান্ডের অন্যতম ০৪ জন আসামীদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার, বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার, মুন্সিগঞ্জ হতে রজব আলী হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার। এছাড়াও র‌্যাব-৩ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কিছু দুর্ধর্ষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল বগুড়া জেলার বগুড়া সদর থানাধীন কৈচড় দক্ষিন পাড়া গ্রামে ১৬ বছর পূর্বে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ উজ্জল প্রামানিক (৪০), পিতা-মৃতঃ আবুল হোসেন প্রামাণিক, সাং-কৈচড় দক্ষিন পাড়া, থানা-বগুড়া সদর, জেলা-বগুড়াকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ধৃত আসামী জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ২০০৬ সালের জুন মাসে ভিকটিম আলো বেগম এর সাথে পারিবারিক ভাবে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহের পূর্বে আসামী উজ্জল এবং তার পরিবার যৌতুক দাবি করলে বিবাহের দিন ভিকটিম আলো বেগম এর পিতা আকবর আলী শেখ আসামী উজ্জল এবং তার পরিবারকে নগদ ৩০,০০০/-টাকা যৌতুক হিসেবে প্রদান করে। বিবাহের এক মাস পর আসামী উজ্জল প্রামাণিক ভিকটিম আলো বেগম এর বাবার কাছে বিদেশ যাওয়ার জন্য যৌতুক হিসেবে আরো ৫০,০০০/-টাকা দাবি করে এবং পূর্বে প্রদানকৃত যৌতুক বাবদ নগদ ৩০,০০০/-টাকা তার মা, ভাই এবং ভগ্নিপতী আত্মসাৎ করে বলে জানায়। উক্ত ঘটনার পর বিষয়টি মীমাংসার জন্য আসামী উজ্জল এর নিজ বাড়িতে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সালিশ বসে।

সালিশে ধৃত আসামী উজ্জল প্রামাণিক এর পরিবারের সকলে ভিকটিম আলো বেগম এর পিতাকে যৌতুক বাবদ আরও ৫০,০০০/-টাকা দিতে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে। ভিকটিম আলো বেগম এর পিতা আসামী উজ্জল প্রামাণিক ও তার পরিবারের দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামী উজ্জল প্রামাণিক এবং তার পরিবার ভিকটিম আলো বেগমকে তালাক দিবে বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পারিবারিক সালিশে যৌতুক এর বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে যাওয়ায় উক্ত ঘটনার পর থেকে আসামী উজ্জল এবং তার পরিবার ভিকটিম আলো বেগমকে বিভিন্ন ভাবে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।


৪। ঘটনার এক পর্যায়ে ০১ আগস্ট ২০০৬ তারিখ ধৃত আসামীর ভগ্নিপতী নাজমুল হোসেন লাবু ভিকটিম আলো বেগম এর পরিবারকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায় যে, ভিকটিম আলো বেগম গুরুতর অসুস্থ। উক্ত সংবাদ শোনার পর ভিকটিম এর পরিবারের লোকজন আসামী উজ্জল এর বাড়িতে গিয়ে ঘরের মেঝেতে ভিকটিম আলো বেগম এর লাশ দেখতে পায়। পরবর্তীতে ভিকটিম এর দুলাভাই মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বুলু বাদী হয়ে ধৃত আসামী মোঃ উজ্জল প্রামাণিককে প্রধান আসামী করে, তার মা আলেয়া বেওয়া, ভাই হিরা প্রামাণিক, বোন মোছাঃ লাভলী বেগম এবং ভগ্নিপতী নাজমুল হোসেন লাবুর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারপিট করতঃ গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার অপরাধে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-৭৫/৭০৬, তারিখ ১৮/০৮/২০০৬, জিআর নং-৭০৬/০৬, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী-২০০৩) এর ১১ (ক) ধারা। উক্ত দায়েরকৃত মামলায়, ধৃত আসামী উজ্জল প্রামাণিক এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বিজ্ঞ আদালত গত ২৪ জুলাই ২০২২ তারিখ বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (১) এর মাধ্যমে মৃত্যুদÐে দÐিত করেন। এছাড়াও উক্ত মামলার অভিযুক্ত অন্যান্য ০৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।

পলাতক জীবন ঃ হত্যাকান্ডের পর আসামী উজ্জল প্রামাণিক তার মা আলেয়া বেওয়াকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় এসে তার আসল পরিচয় গোপন রেখে পলাতক জীবনযাপন শুরু করে। পরবর্তীতে স্থানীয় একটি ফার্নিচারের দোকানে দৈনিক ৬০০/-টাকা মজুরীতে সে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে। পালিয়ে আসার ছয় মাস পর মোছাঃ নাছিমা খাতুন, পিতা-হাবিবুর রহমান, সাং-হাসিল রঘুনাথপুর, রায়গঞ্জ, পল্লী, সিরাজগঞ্জকে বিবাহ করে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ২য় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করে আসছে। তাদের ১০ বছর এবং ০৩ বছর বয়সী ০২ টি পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী নাছিমা খাতুন একটি গার্মেন্টস্ কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করত।

আসামী উজ্জল পালিয়ে আসার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বগুড়ায় নিজ বাড়ি এবং তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে গাজীপুরে আত্মগোপনে ছিল। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে তার জনৈক আত্মীয়ের মাধ্যমে সে জানতে পারে যে, হত্যা মামলার আসামী হিসেবে তার মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা হয়েছে। উক্ত সংবাদ পাওয়ার পর থেকে সে আশুলিয়ায় স্বপরিবারে একটি ভাড়াকৃত বাসায় আত্মগোপন করে। এমতাবস্থায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আশুলিয়া এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সে প্রায় ১৬ বছর যাবৎ পলাতক জীবনযাপন করছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।