স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর বিজয় র‌্যালীকে ‘গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার আন্দোলনের শুভ সূচনা বললেন মীর্জা ফখরুল

আপডেট: ডিসেম্বর ১৯, ২০২১
0

স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর বিজয় র‌্যালীকে ‘গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার আন্দোলনের শুভ সূচনা’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার বিকালে বিজয় র‌্যালীপূর্ব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ আজকের এই র‌্যালী বাংলাদেশের জনগনের নতুন করে জেগে উঠবার র‌্যালী, আজকের এই র‌্যালী বাংলাদেশের জনগনের সংগ্রাম করা শুরু করার র‌্যালী, আজকের এই র‌্যালী হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার র‌্যালী।”
‘‘ আসুন- আজকের এই র‌্যালীর মধ্য দিয়ে আমরা সেই শুভ সূচনা করি, যে সূচনার মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব, তার আমরা সুচিকিতসার ব্যবস্থা করতে পারবো।এ্কই সাথে আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যিনি ১৯৭১ সালে শিশু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাকে নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে আমরা এখানে আমাদের নেতৃত্বে বসাতে পারব এবং আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা রয়েছে তাকে প্রত্যাহার করিয়ে দেশে গণতন্ত্রকে মুক্ত করে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব, সত্যিকার অর্থেই আমরা আমাদের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারবো।”
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের কী দুর্ভাগ্য, আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি জাতি যে, আজকে ৫০ বছর পরে আমরা দেখছি যে, এমন একটি সরকার যারা জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা আজকে ১৯৭১ সালের সমস্ত চিন্তাভাবনাগুলোকে, আশা-আকাংখাগুলোকে, চেতনাকে ধবংস করে দিয়ে তাদের একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে গোটা জাতির উপরে নির্যাতন-নিপীড়নের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে।”
‘‘ তারা একে একে আমাদের অর্জিত সমস্ত কিছু, আমাদের সার্বভৌমত্ব ধবংস করেছে, আমাদের স্বাধীনতা ধবংস করেছে, আমাদের ভোটের অধিকা্র কেড়ে নিয়েছে, আমাদের লেখার অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আমাদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।”
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘‘ তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিলো, তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এদেশের সমস্ত মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। রাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।”
‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নয় বছর সংগ্রাম করে গণতন্ত্রকে পূণরুদ্ধার করেছিলেন এবং সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন তাকে এই সরকার ধবংস করে দিয়েছে।”
বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিতসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমরা ভারক্রান্ত হৃদয়ে উপস্থিত হয়েছি যখন আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা, এই দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্য তিনি আজকে এই সরকারের মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে অবস্থান করছেন।”
‘‘ সেইজন্য এই র‌্যালী আজকে গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করি সেই সময়ের অনেকে এখানে উপস্থিত আছেন। সেই যুদ্ধ করেছিলাম আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, আমরা একটা মুক্ত স্বদেশ পাবো বলে, সেই যুদ্ধ করেছিলাম আমাদের বাক স্বাধীনতা থাকবে, আমাদের লেখার স্বাধীনতা থাকবে, আমরা আমাদের সন্তানের জন্য একটা বাসভূমি নির্মাণ করতে সক্ষম হবো সেখানে কোনো রকমের অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন-দমন থাকবে না।”
ফকিরেরপুল বাজার থেকে শুরু করে নয়া পল্টন সড়কের শেষ প্রান্ত নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরার মোড়ে পর্যন্ত সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে তিল পরিমান ঠাঁই ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি দুপুর ২টা ২০ মিনিটে এই শোভাযাত্রা শুরু করে।
এর আগেই বেলা ১২টায় নয়া পল্টনের নাইটেঙ্গল থেকে ফকিরেরপুল বাজার পর্যন্ত সড়ক ভরে যায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকে। এই দীর্ঘ সড়কে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল মিছিলে নয়া পল্টনে এলাকা জনসমুদ্রে রুপ নেয়।
নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে ছিলো লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা এবং জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।
‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি থাকতে দেবো না’, ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথেম, ফয়সালা হবে রাজপথে’ ইত্যাদি শ্লোগানে শ্লোগানে নেতারা ছিলো সর্বক্ষন সরব-সোচ্চার। এই সময়ে সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন নেতা-কর্মীদের করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে।
‘শোভাযাত্রায় জনস্রোত’
বর্ণাঢ্য র‌্যালী শুরুর আগে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় খোলা ট্রাকের মঞ্চে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে র‌্যালীর শুরুর ঘোষণা দেন। পরে তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমূখ নেতাদের নিয়ে পায়ে হেটে র‌্যালীতে অংশ নেন।
র‌্যালীতে সামনে ছিলো মুক্তিযোদ্ধা দল এবং এরপরে মহিলা দল দল ও ছাত্র দল। কৃষক দল ‘সুবজ রঙ’ এবং যুব দলের ‘লাল রঙ’ এর টুপি পড়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
র‌্যালীতে ছোট ছোট ট্রাক খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান, তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি দিয়ে সাজিয়ে জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধে উজ্জীবনী বিভিন্ন দেশাত্মকবোধক গান বাজাতে দেখা গেছে।
নয়া পল্টনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে আবার নয়া পল্টনে এসে র‌্যালী শেষ হয়। এই র‌্যালী যখন শুরু হয়ে শান্তিনগরের মোড় ঘুরে তখন র‌্যালী শেষ সীমানা ছিলো নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে।
এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বিএনপির মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, বিলকিস জাহান শিরিন, সৈয়দে এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, জয়নাল আবেদীন, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলালম, মীর সরফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, শামীমুর রহমান শামীম,আবদুস সালাম আজাদ, অনি ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, আমিরুল ইসলাম আলিম, আমিরুজ্জামান শিমুল, আকরামুল হাসান, হায়দার আকবর লেলিন, অঙ্গসংগঠনের রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, সাদেক আহমেদ খান, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আনোয়ার হোসেইন, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হেলাল খান, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুল কালাম আজাদ, ডা. হারুন আল রশিদ, ডা. আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমূখ নেতারা বিভিন্ন মিছিলে নেতৃত্ব দেন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে।
বিএনপির শোভাযাত্রা উপলক্ষে ব্যাপক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। শান্তিনগরের মোড়ে পুলিশ কাটাতার বসিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।
দুপুর থেকে শোভাযাত্রা উপলক্ষে নয়া পল্টনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে পুলিশ। ফলে কাকরাইল, মালিবাগ, বিজয়নগর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।