৪৮ ঘন্টার মধ্যে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দ্রুত বিদেশে পাঠনোর আলিট্টমেটাম মীর্জা ফখরুলের

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
0

৪৮ ঘন্টার মধ্যে অসুস্থ খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠনোর আলিট্টমেটাম দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এভারকেয়ার হাসপাতালে অসুস্থ খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে গিয়ে রোববার বিকালে বিএনপির সমাবেশে মহাসচিব সরকারের কাছে এই সময়সীমা বেঁধে দেন।

তিনি বলেন, ‘‘ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। এতো অসুস্থ যে এখন তার চিকিতসকরা বলেছেন যে, অবিলম্বে তার চিকিতসা না করা হয় বিদেশে… বাংলাদেশে তার সেই চিকিতসা সম্ভব নয়। তা না হলে তাকে বাঁচানো দুস্কর হয়ে যাবে। আমি যখন ডাক্তাদের সাথে কথা বলতে গেছি তখন তারা বলেছেন, আপনাদের যদি কিছু করার থাকে তাহলে করেন দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।”

‘‘ আজকে পরিস্কার করে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে এবং তাকে উন্নত চিকিতসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে।”

‘অন্যথায় ম্যাডামের কিছু হলে তার সব দায়-দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে’ বলে হুশিয়ারিও দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা বাংলাদেশের জনগনকে সঙ্গে নিয়ে এই কথাটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই অবৈধ ক্ষমতাদখলকারী সরকারকে বলতে চাই… দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে চিকিতসার জন্য বিদেশে উন্নত হাসপাতালে প্রেরণ করুন। এই ক্ষেত্রে যদি কোনো ক্ষতি হয় তাতে নেত্রীর ক্ষতি হবে না, তার পরিবারের ক্ষতি হবে না, এই বাংলাদেশের বড় ক্ষতি হবে।’’

‘‘ শুধু বাংলাদেশ নয় এই এশিয়া উপমহাদেশে যে ক‘জন নেতা-নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন তাদের কয়েকজনের মধ্যে আমাদের নেত্রী আছেন। কয়েকদিন আগে আমাদের অফিসে জার্মান শার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স এসেছিলেন তিনি বললেন, ম্যাডামে কেমন আছেন। আমরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। আমরা তাকে অন্যভাব্ দেখি। এই হচ্ছে পাশ্চাতের ধারণা।’’

বিদেশে যেতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে …আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এরকম বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এসব ছলচাতুরি করে কোনো লাভ নেই… আবেদন করেন নাই। পরিবার থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিলো। সেই চিঠিতে তার মুক্তির কথা বলা হয়েছিলো একই সঙ্গে তাকে চিকিতসার জন্য বাইরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিলো।”

‘‘ আপনারা এখন বেমালুম চেপে গিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন। আমি বলব, আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্তি দিয়ে এখন প্রমাণ করে যে, আপনারা গণতন্ত্রের কিছুটা হলে বিশ্বাস করেন।”

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার, ফুসফুস, হৃদরোগ ভুগছেন। গত ৯ আগস্ট অসুস্থ অবস্থায় তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড অধীনে চিকিতসাধীন আছেন।

গতকাল শনিবার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ যে নেত্রী অত্যন্ত শক্ত মনের জোর নিয়ে সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে কাটিয়ে উঠেন যিনি ৫ বছর বন্দি থাকা অবস্থাও কোনোদিনও তার চোখে আমরা পানি দেখিনি।”

‘‘ গতকাল তাকে অত্যন্ত অসুস্থ দেখেছি… আমার প্রথমবারের মতো মনে হয়েছে যে, সত্যি আমাদের ম্যাডাম আমাদের মাতা, আমাদের ম্যাডাম অনেক অনেক বেশি অসুস্থ।”

এই সময়ে নেতা-কর্মীরা মুহুর্র মুহুর্র শ্লোগান দিতে থাকে খালেদা জিয়ার কিছু হলে আগুন জ্বলবে ঘরে ঘরে’।

বিকাল তিনটায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি উন্নত চিকিতসায় বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশ হয়। নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার ছবি সম্বিলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিল করে সমাবেশ স্থলে আসে। বিকাল চারটার মধ্যে নয়া পল্টনের সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

মহানগর দক্ষিন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের রাশেদ ইকবাল খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক লুতফুর রহমান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে ছড়াকার আবু সালেহ তার লেখা ছড়া ‘ধরা যাবে না, বলা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না কথা, রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা’ আবৃত্তি করে শোনান।