“শুধু মার্কিন নয়, দেশের জনগনই এই সরকারকে স্যাংশন দিচ্ছে’

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
0

‘শুধু মার্কিন নয়, দেশের জনগনই এই সরকারকে স্যাংশন দিচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশে দলের মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ শুধু মার্কিন স্যাংশন নয়, এদেশের মানুষ এখন স্য্যংশন দিচ্ছে এই সরকারকে। এদেশের মানুষ পরিস্কার ভাষায় একবাক্যে বলছে, এখন অনেক হয়েছে, অনেক অত্যাচার করেছো, নির্যাতন করেছো, কারাগারে আটক করেছো আমাদের নেতাদের, আমাদের মাকে… আর আমরা সেটা হতে দেবো না। এজন্য আমরা আন্দোলন করছি।’’

‘‘ এখনো সময় আছেন, এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা ভেবে নিয়ে আপনারা পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে এই রাজনৈতিক সংকট দূর করুন। অন্যথায় সকল দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকেই নিতে হবে।’’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখন বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আপনারা যতই চেষ্টা করেন এই দেশের মানুষকে আর ঘরে ফেরাতে পারবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ আছি, শান্তিরপূর্ণ থাকবো, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করে যাবো এবং আশা করব এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা শুনে এই শেখ হাসিনার শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দেবে।”

‘‘তা যদি না হয়, বাংলাদেশের মানুষ জানে কি করে দাবি আদায় করতে হবে।এদেশের মানুষ এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। টেনে হিঁচড়ে আপনাদেরকে নামাবে। এটা আপনাদের জন্য জন্য ভালো হবে না।”

‘যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অসন্মানজনক’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে গায়ের মধ্যে আগুন লেগেছে। অনেক হাঁক ডাক করে … আমেরিকা গিয়েছেন। ভেবেছেন, ওখানে গিয়ে বাইডেনের(যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে পরিবারকে নিয়ে ছবি তুলে একটা সুরাহা বোধহয় করা যাবে। গেছে করা? ভয়াবহ। ওইখানে যখন উনি আছেন আমেরিকায় বসে, ওই সময়ে আমেরিকার থেকে ভিসানীতি সেটা কার্য্কর করা হলো। পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে, এই নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে, যারা অতীতে দাঁড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবে।”

‘‘ আমাকে সাংবাদিক ভাইয়েরা গতকাল বার বার জিজ্ঞাসা করেছেন যে, ভিসানীতি নিয়ে আপনার বক্তব্য কি। আমি বললাম যে, একটা সার্বভৌম দেশ ও জাতির জন্য যারা আমরা যুদ্ধ করেছি তাদের জন্য খুব সন্মানজনক নয়। এই অসন্মান কে বয়ে আনলো? এই অসন্মান বয়ে এসেছে এই ভয়াবহ দানবীয় আওয়ামী লীগ সরকার।আজকে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্যে, তারা একদলীয় শাসনকে পাকাপুক্ত করতে গিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিয়ে মানুষের সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে আজকে তারা জোর করে আবার একটা নির্বাচন করতে ততপর।’’

তিনি বলেন, ‘‘ একইভাবে আবার সেই একই কায়দায় সাউন্ড গ্রেনেড আমদানি করছে। পত্রিকায় দেখেছেন তো এবং আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আবার অন্যায়ভাবে ব্যবহার করবে। আমাদের মানুষের যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ রাজপথের যে প্রতিবাদ সেই প্রতিবাদকে তারা স্তব্ধ করে দেবে।”

‘‘ আজকে সমস্ত দেশে কিছু সংখ্যক অতিউতসাহি পুলিশ কর্মকর্তা তারা আজকে আবারো জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে চাই, একটা বেআইনি সরকারকে আবার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য গণবিরোধী সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য আপনারা দয়া করে অবস্থান নেবেন না।”

বিকাল তিনটায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি উন্নত চিকিতসায় বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশ হয়। নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার ছবি সম্বিলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিল করে সমাবেশ স্থলে আসে। বিকাল চারটার মধ্যে নয়া পল্টনের সড়ক জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

মহানগর দক্ষিন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মতস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের রাশেদ ইকবাল খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক লুতফুর রহমান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে ছড়াকার আবু সালেহ তার লেখা ছড়া ‘ধরা যাবে না, বলা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না কথা, রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা’ আবৃত্তি করে শোনান।