৬’শ গুম ও সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেও আন্দোলনে দমাতে পারেনি— মির্জা ফখরুল

আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০২৩
0

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান ফ্যাসিষ্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিএনপির প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। ৬’শ নেতাকর্মীকে গুম করে ফেলা হয়েছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। দেখেছি এখনও কয়েক হাজার নেতাকর্মী জেলে আছেন। অনেক শীর্ষ নেতারাও জেলে আছেন। কিন্তু কারও মধ্যে হতাশা দেখি নি, সবাই উজ্জীবিত। এমন অবস্থার পরও আমরা কেউ পিছিয়ে নেই। আরও উজ্জীবিত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। যত অত্যাচার আসুক, নির্যাতন-নিপীড়ন আসুক আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান ভয়াভহ দানব সরকারকে পরাজিত করব। সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করব।

শনিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ‘চলমান আন্দোলনে তিন শহীদ নেতার পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা’য় জন্য এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়। এ সময় নিহত তিন নেতার পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
৭ ডিসেম্বরে নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পল­বী থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেক দলের যুগ্ম সম্পাদক মকবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমা আক্তার বর্ষা তার মেয়ে মিথিলা আক্তার মারিয়াকে নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরাও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। মিতিলা আক্তার মারিয়া বলেন, আমার স্বামী ভালো মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরেছে। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। তবে জানি এই সরকারের সময় আমার স্বামী হত্যার কোন বিচার পাব না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। 
গত ২৪ ডিসেম্বর গনমিছিলকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ে সংঘর্ষে নিহত হন বোদা উপজেলা ময়দানদীঘি বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর রশিদ আরেফিন। তার স্ত্রী শিরিন আক্তার ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল আল মাহিকে দেখিয়ে বলেন, এতটুকু ছেলেকে যারা এতিম করেছে এর বিচার চাই। 

গুলিতে নিহত বাগেরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম ভ‚ইয়া তানুর স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বলেন, আমার স্বামী আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বর্বরতার শিকার। বাসা থেকে ডেকে নিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মামলার বাদি আমি নেজেই। তাই ঘর থেকে বেরুতেই এখন ভয় পাই। ছেলের শোকে আমার শশুর মারা গেছেন, শাশুরিও অনেক অসুস্থ। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমার স্বামীর সুষ্ঠু বিচার যেন আমি পাই। এ সময় সঙ্গে তার মেয়ে তানজিনা তাশমিও ছিলেন। 
এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ উপস্থিত নেতাদেরও কাদতে দেখা যায়। মির্জা ফখরুল বলেন, যারা প্রান দিয়েছেন তারা একটি আদর্শ ও লক্ষের জন্য প্রান দিয়েছেন। নিজের দেশকে মুক্ত ও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারা প্রান দিয়েছেন। গত ২২ আগষ্ট থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যখন গনতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করি, তখন থেকে আমাদের ১৫ জন ভাই শহীদ হয়েছেন। তারা পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ হয়েছেন। এই ভয়াভহ ফ্যাসিবাদী অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অত্যাচার-নির্যাতন-নীপিড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বীরের মতো শহীদ হয়েছেন। কেউ পেছনে পালাতে গিয়ে নিহত হননি, শহীদ হননি। তারা বুক পেতে দিয়ে চলে গেছেন। তারা দেশের জন্য যে আÍত্যাগ করে গেছেন তা গনতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে। এর মধ্যে দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা আরও ত্যাগ শিকারের জন্য শপথ গ্রহন করেছেন। 

তিনি বলেন, যুগে যুগে বড় কিছু অর্জন করতে গেলে এই আÍত্যাগ করতে হয়। একাত্তর সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম তখন লাখ লাখ মানুষ প্রান দিয়েছেন। তখন অনেক পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছিল। আজকেও একটা দানবীয় শক্তি আমাদের সব অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা কেউ শান্তিতে নেই। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, দেশের মানুষ যাকে মা বলে ডাকেন সেই নেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে মিখ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর বন্দি করে রেখেছেন। যারা কথায় উজ্জীবিত হয়ে নতুন সংগ্রাম শুরু করেছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেমেছি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজকে সুদুর ৮ হাজার মাইল দুরে অবস্থান করছেন। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিমুহুর্তে তিনি কাজ করছেন । 
এ সময় গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার প্রতিটি নেতার পরিবারের পাশে দাড়ানোর জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, প্রতিটি পরিবারের পাশে বিএনপি সব সময় পাশে থাকবে। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা আমানউল­াহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, পঞ্চগড় জেলার সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী প্রমুখ।