`৯১ ‘র মতো ‘নির্দলীয় সরকার’ এর অধীনেই নির্বাচন চায় বিএনপি’

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২
0

৯১ সালের মতো ‘নির্দলীয় সরকার’ এর অধীনেই নির্বাচন চায় বিএনপি।

রোববার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ দেশে যে সংকট চলছে এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের কোনো বিকল্প নেই সংগ্রাম-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে পদত্যাগ করতে।”

‘‘ তাদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের মতো তাদেরকে ক্ষমতা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন করে সত্যিকার অর্থেই জনগনের প্রতিনিধিশীল একটা পার্লামেন্ট এবং সরকার গঠন করা।”

‘‘তাহলে শুধুমাত্র এই সংকট উত্তরণ করা সম্ভব হবে, তাহলেই শুধুমাত্র জাতির একটা ভবিষ্যত নির্মাণ করা সম্ভব হবে, তাহলেই আজকে যেভাবে পরিকল্পিতভাবে এই দেশকে একটা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা হয়েছে, যেভাবে একটা পরিকল্পিতভাবে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধবংস করে ফেলা হয়েছে আবার সেগুলোকে নির্মাণ করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।”-বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের এই আহবান দেশবাসীর কাছে থাকবে, জনগনের কাছে থাকবে যে, আসুন আর কোনো দ্বিধা নয়, দ্বন্দ্ব নয়। এই দেশকে রক্ষা করবার জন্যে, গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্যে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করবার জন্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।”

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আজকে জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা দূর্বার সংগ্রাম করি, যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই ফ্যাসিবাদী, স্বৈরাচারী, একনায়্কতন্ত্রবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগনের সরকার গঠন করতে পারি- আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাই।”

রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ নির্বাচন : নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের রোল মডেল’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ নব্বইয়ে স্বৈরাচারের পতনের পরে এদেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার হয়েছিলো।তখনকার সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিধান ছিলো না।কিন্তু সকলের জাতির জনগনের স্বার্থে সেইদিন নির্দলীয় নিরপেক্ষ একটি সরকার হয়েছিলো। সংবিধানে যে ছিলো না তাতে কোনো বাঁধা হয় নাই। এটা আজকে আমরা জাতির কাছে তুলে ধরতে চাই।”

‘‘ জাতীয় প্রয়োজনে সংবিধানে কী আছে নাই সেটা বড় কথা নয়, ৯১৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। সেই সরকার একটি নির্বাচন দিয়েছিলেন যে নির্বাচনটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং জনগনের স্বতস্ফূর্ত ভোটের মাধ্যমে একটি অংশগ্রহনমূলক আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সেই নির্বাচনে আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠত্ পেয়েছিলো এবং সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিলো।”

তিনি বলেন, ‘‘ বর্তমান প্রেক্ষাপটে আজকে যারা সরকারের তারা ভোট ডাকাতি করে, গায়ের জোরে বিনাভোটের নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট সরকারে দেশ পরিচালনা করছে। তাই ৯০তে যে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন হয়েছিলো, আজকে সেই প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়ে্ছে।”

‘‘ কোনো দেশের স্বৈরাচার কোনো গণআন্দোলন ছাড়া ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চায় না। আমরা বিশ্বাস করি, এই ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই আজকের এই দিনটিকে সামনে রেখে আমাদেরকে নব্বইয়ের মতো গণআন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘ আজকে পত্রিকায় দেখলাম কী নাম যেন অখ্যাত-কুখ্যাত একজন লোক তাকে দেয়া হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে। হাবিবুল আউয়াল সম্ভবত। কখনো নাম শুনি নাই। এই সমস্ত অখ্যাত-কুখ্যাত লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা সেই ব্যাপার আগ্রহী নই্।”

‘‘ কিন্তু খুবই খারাপ লাগে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য, গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার জন্য একদল জল্লাদ নিয়োগ করেছে, নির্বাচন কমিশন নয়। এদেরকে জল্লাদ বলা হবে। এরা হলো একদল জল্লাদ, যারা এই দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করবার জন্য যারা এই সরকারকে সহযোগিতা করবে।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা এই নির্বাচনী কমিশন নিয়ে আগ্রহী নই। আমরা আগ্রহী নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার। নিরপেক্ষ সরকার না হলে এই দেশে কোনোদিন সুষ্ঠু হবে না, ভালো হবে না।”

‘‘ যতক্ষন পর্যন্ত নিরপেক্ষ সরকার না হবে ততক্ষন পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন চলবে।”

জাতীয় কমিটির আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুব দলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ছাত্র দলের ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমূখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।