রাজধানীতে র‌্যাব-৩ এর অভিযানে অজ্ঞানপার্টি এবং ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ২৯ জন গ্রেফতার

আপডেট: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২
0

র‌্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, মুগদা, পল্টন, হাতিরঝিল এবং তেজগাঁও এলাকা হতে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি এবং ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ২৯ জন গ্রেফতার; অজ্ঞান ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত মলম ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

স্টাফ অফিসার (মিডিয়া)র সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

র্যাব জানায় , রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ও পথচারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে জখমপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। এসব ভ‚ক্তভোগীদের বেশির ভাগই কোন আইন শৃংখলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয় না। ফলে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের প্রায় সকলেই মাদকাসক্ত। সাম্প্রতিককালে ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। ফলশ্রæতিতে র‌্যাব উক্ত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল ০৮/০৮/২০২২ তারিখ রাতে রাজধানীর কমলাপুর এলাকা থেকে এক নারীর গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে দৌড়ে পালানোর সময় পিছু ধাওয়া করে ছিনতাইকারী ১। মোঃ আরিফ হোসেন (২৯), পিতা-মৃত জালাল উদ্দিন, সাং-ফতুয়াকান্দি, থানা-মতল উত্তর, জেলা-চাঁদপুরকে হাতে নাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ছিনতাইকৃত চেইনটি ভিকটিমকে সাথে সাথে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, মুগদা, পল্টন, হাতিরঝিল এবং তেজগাঁও থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য ২। মোঃ ইসলাম (২২), পিতা-মৃত মতিউর রহমান, সাং-কাদিরপুর, থানা-শিবচর, জেলা-শরিয়তপুর, ৩। মোঃ বাবু (২৭), পিতা-শুকুর খালাসী, সাং-ফুলতলা, থানা-ভাঙ্গা, জেলা-ফরিদপুর, ৪। মোঃ টিটু (২০), পিতা-আবু মিয়া, সাং-উতুপুর, থানা-রামগঞ্জ, জেলা-লক্ষীপুর, ৫। মোঃ শরিফ (২১), পিতা-মোঃ জয়নাল আবেদীন, সাং-দুলারহাট, থানা-চরফ্যাশন, জেলা-ভোলা, ৬। মোঃ নুরেআলম (২২), পিতা-মোঃ আব্দুল সাত্তার, সাং-চর বাকর, থানা-দেবীদ্ধার, জেলা-কুমিল্লা, ৭। মোঃ মুরাদীল মুস্তাকিম @ মুরাদ (১৯), পিতা-মোঃ জামাল, সাং-রায়পুর, থানা-রায়পুরা, জেলা-নরসিংদী, ৮। মোঃ জালাল (১৯), পিতা-মোঃ আলাল, সাং-অজ্ঞাত, থানা-অজ্ঞাত, জেলা-জামালপুর, ৯। হৃদয় (১৮), পিতা-মোঃ হোসেন, সাং-চরবগা, থানা-রায়পুর, জেলা-ল²ীপুর, ১০। মোঃ হোসেন @ মোটু (১৯), পিতা-মোঃ মাহফুজ, সাং-সাহাপুর, থানা-কসবা, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, ১১। মোঃ জয় (১৯), পিতা-মোঃ জহির, সাং-আষ্টঘর, থানা-কালকিনি, জেলা-মাদারীপুর, ১২। মোঃ সুমন (২১), পিতা-মোঃ জহির, সাং-আষ্টঘর, থানা-কালকিনি, জেলা-মাদারীপুর, ১৩। মোঃ ইয়াছিন রাব্বি (২০), পিতা-আলমাস মৃধা, সাং-বড় গোপালধী, থানা-দশমিনা, জেলা-পটুয়াখালী, ১৪। টিটু (৪০), পিতা-মাহাবুব, সাং-টুলাশার বেপারী পাড়া, থানা-পালং, জেলা-শরীয়তপুর, ১৫। মোঃ পরান (২৬), পিতা-মৃত কালা চান, সাং-বিনোদপুর, থানা-মুন্সিগঞ্জ সদর, জেলা-মুন্সিগঞ্জ, ১৬। রাসেল (২২), পিতা-মোঃ ইয়াছিন, সাং-ঢাকা কমলাপুর রেলষ্টেশন এলাকায় ভাসমান, থানা-শাহজাহানপুর, ডিএমপি, ঢাকা, ১৭। মোঃ জীবন সরদার(২১), পিতা-মৃত ফারুক সরদার, সাং-পাগলারমোড় দক্ষিণপাড়া, থানা-নড়িয়া, জেলা-শরিয়তপুর, ১৮। মোঃ শুক্কুর (২০), পিতা-মোঃ রাজু, সাং-বেলতলী, থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুর, ১৯। মোঃ সাগর হোসেন (২২), পিতা-মোঃ সিরাজ, সাং-কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ভাসমান, থানা-শাহজাহানপুর, ডিএমপি, ঢাকা, ২০। মাসুম খান (১৯), পিতা-মৃত রবিন খান, সাং-ফাজিলপুর, থানা-বালাগঞ্জ, জেলা-সিলেট, ২১। মিহির তালুকদার (২১), পিতা-মৃত মধু তালুকদার, সাং-কারয়াজান, থানা-ধর্মপাশা, জেলা-সুনামগঞ্জ, ২২। মোঃ হোসেন (২২), পিতা-আবুল কাশেম, সাং-গুলিস্থান এলাকায় ভাসমান, থানা-পল্টন, ডিএমপি, ঢাকা, ২৩। মোঃ ফারুক (২৮), পিতা-আরব আলী, সাং-আজাবপুর, থানা-লাকসাম, জেলা-কুমিল্লা, ২৪। মোঃ মেহেদী হাসান রানা (২৪), পিতা-নুরুল হক, সাং-নামালকিয়া, থানা-পাকুন্দিয়া, জেলা-কিশোরগঞ্জ, ২৫। মোঃ সুজন (২২), পিতা-দিলু তপদার, সাং-গুলিস্থান এলাকায় ভাসমান, থানা-পল্টন, ডিএমপি, ঢাকা, ২৬। মোঃ জুলহাস (৩০), পিতা-মৃত নয়ন মিয়া, সাং-বানিয়ার চর, থানা-নরসিংদী সদর, জেলা-নরসিংদী, ২৭। মোঃ কবির হোসেন (২২), পিতা-মৃত অহিদ, সাং-মতিঝিল পার্কের আশ পাশে ভাসমান, থানা-মতিঝিল, ডিএমপি, ঢাকা, ২৮। মোঃ দ্ওেয়ান আলী (২৫), পিতা-মৃত ইদ্দ্রিস আলী, সাং-মানিগাও, থানা-তাহেরপুর, জেলা-সুনামগঞ্জ এবং ২৯। মোঃ তৌহিদ হ্ওালাদার (২২), পিতা-মোঃ আকরাম হাওলাদার, সাং-তেতুল বাড়িয়া জামের তল, থানা-মোড়লগঞ্জ, জেলা-বাগেরহাটদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকালে উক্ত আসামীদের নিকট হতে ১৮ টি মোবাইলফোন, ০৭ টি সুইচ গিয়ার, ০২ টি এন্টি কাটার, ০৬ টি বেøড, ০১ টি কাঁচি, ০১ টি চাকু, ০৩ টি ক্ষুর, ০৭ টি বিষাক্ত মলমের কৌটা, ০১ টি স্বর্ণের চেইন এবং নগদ ৩২৪/-টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারী সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। তারপর সহজ সরল যাত্রীদের টার্গেট করে কখনও তাদেরকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং বিষাক্ত চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। উক্ত বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেওয়ার পর উক্ত যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। এছাড়াও কখনও ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মূখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে যাত্রীদের যন্ত্রণায় কাতর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। উক্ত সময়ে ভূক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা সীমাহীন দূর্ভোগের মধ্যে পড়েন। তারা স্বজনদের খোঁজে দিশাহারা হয়ে দ্বিগবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। এসব ছিনতাইকারী সদস্যদের ভূক্তভোগীরা খুব কম ক্ষেত্রেই সনাক্ত করতে পারেন। ফলে এসব ছিনতাইকারী সদস্যরা নির্বিঘেœ তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়াও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে উৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করেনা। খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালবার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ সকল ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার ফলে পথচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রাজধানীতে আগত যাত্রীরা যাতে নিরাপদে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করে নির্বিঘ্নে স্বস্তির সাথে বাড়ী ফিরে যেতে পারেন এলক্ষ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।