`কেশের গন্ধ আনিছে আশিন-হাওয়া!’

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
0

প্রকৃতই প্রকৃতিতে শরতের পরিপূর্ণ রূপ যেন ফুটে উঠে আশ্বিনেই।

শিউলী ফুল ফোটার মাস। শীতকাল যথেষ্ট দূরে হলেও শিশির আনাগোনা লক্ষ্যণীয়। খুব প্রত্যুসে সবুজ ঘাসের দিকে তাকালে ঘাসের উপর বিন্দু বিন্দু জমে থাকা শিশির মুগ্ধ করে মনকে এবং তখন প্রথম সূর্য-কিরণ যে সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে তা মনকে আকৃষ্ট করে। যেখানেই শিউলি ফুল গাছ খো যায়, গাছতলায় ভরে থাকে শিউলি ফুলি-শুভ্রতার সাথে কমলা রঙের বোটা আলাদাভাবে সৌন্দর্য বিকাশ করে। শীতের আমেজ ভরা দিন এবং রাত আশ্বিন মাসের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলে। খুব বেশি না হলেও মন কেড়ে নেয়া বাক্য-বিন্যাস-মাধ্যমে কবি নজরুল এই আশ্বিন মাসের রূপ-সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছেন। শুরু করছি কবিতার মালা দিয়ে-
* আজ আকাশ ডোবানো নেহারি তাঁহারি চাওয়া,
ঐ শোকালিকা-তলে কে বালিকা চলে?
কেশের গন্ধ আনিছে আশিন-হাওয়া!
এনেছে রে সাথে উৎপলাক্ষী চপলা কুমারী কমলা ঐ
সরমিজ-নিভ শুভ্র বালিকা
এল বীণা-পাণি অমলা ঐ।
Ñআগমনী

* আজ মুক্ত-বেণী মেয়ে একাকী চলে,
ঐ শেফালি-তলে হের শেফালি-তলে।
ওড়ে এলোমেলো অঞ্চল আশ্বিন-বায়,
হানে চঞ্চল নীল চাওয়া আকাশের গায়!
-জাগৃহি

* বেদনা-হলুদ-বৃন্ত কামনা আমারৎ
শেফালির মত শুভ্র সুরভি-বিথার
বিকশি উঠিতে চাহে, তুমি হে নির্মম,
দলো বৃন্ত ভাঙো শাখা কাঠুরিয়া সম!
আশ্বিনের প্রভাতের মত ছলছল
করে ওঠে সারা হিয়া, শিশির-সজল
টলটল ধরণীর মতো করুণায়।
-দারিদ্র্য

* আজ আসল ঊষা, সন্ধ্যা, দুপুর,
আসল নিকট, আসল সুদূর,
আসল বাধা-বন্ধ-হারা ছন্দ-মাতন
পাগলা-গাজন-উচ্ছ্বাসে!
ঐ আসল আশিন শিউলি শিথিল
হাসল শিশির-দুব্ঘাসে!
আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে।
-আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে

ভাদ্রের কাঠফাটা রোদ আর উষ্ণতম প্রকৃতিতে যখন জীবনপ্রাণ ওষ্ঠাগত, ঠিক তখনই যেন আশ্বিন নিয়ে আসে এক টুকরো স্বস্তির নিঃশ্বাস। আশ্বিনের মধ্য দিয়েই যেন প্রকৃতি জানান দেয় শীতের আগমনী রূপ। দিগন্ত বিস্তৃত প্রান্তরে শুভ্র কাশফুলের সঙ্গে পেঁজা তুলার মতো ভাসমান সাদা মেঘের ভেলার মিতালি চোখে পড়ে আশ্বিনেই।
শরতের প্রকৃতি একটু অন্যরকম। জংলা জলাজমিতে ফোটে অজস্র শালুক ফুল।
কাশফুল, ঝিলেবিলে শাপলা-শালুক, শিউলির সুবাস, নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা এসবই শরতের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ।