আইন করার নামে আরো একটি পাতানো নির্বাচন চায় আ’লীগ– মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২২
0

নির্বাচন কমিশন গঠনে তাড়াহুড়া করে আইন করার উদ্যোগকে আরেকটা পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকে থাকার নীলনকশা’ হিসেবে দেখেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ বিএনপি মনে করে যেহেতু এই সংসদ জনগনের ভোটে বৈধভাবে নির্বাচিত নয় সেইহেতু এই সংসদের কোনো নৈতিক এ্রখতিয়ার নেই এই ধরনের কোনো আইন প্রণয়নের। গোপনীয়তার সঙ্গে তাড়াহুড়া করে এই আইন প্রণয়নের প্রচেষ্টা আওয়ামী লীগের জনগনের সঙ্গে প্রতারনা করে আর একটি পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার নীল নকশা মাত্র।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো নির্বাচন কমিশনেই অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হবে না যদি না নির্বাচনকালীন সম্রেয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের এক তরফা সাজানো ভোটারবিহীন ও মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

‘‘ বর্তমান আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর, সকল রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহনমূলক গ্রহনযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার এক মাত্র পথ, এরকোনো বিকল্প নেই।”

এই লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি ও জনগনের ঐক্যে গড়ে দূর্বার আন্দোলনের আহবানও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারের নিয়োগ আইন-২০২২’ পাস হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে এই বিলটির মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে উপস্থাপন এবং আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পর্য়ালোচনা করা হয়।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ১২টা শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন জাতিসংঘ মিশনে পাঠানো চিঠির বিষয়টি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হত্যা, খুন, গুম, বিচা্রবর্হিভুত হত্যাকান্ডের জন্য র‌্যাবসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং এর সূদূর প্রসারী প্রভাব বাংলাদেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে স্থায়ী কমিটি মনে করে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির সকল দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

গত ১০ জানুয়ারি সস্ত্রীক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর উত্তরার বাসায় আইসোলেশনে পর করোনামুক্ত হয়ে এই প্রথম গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন বিএনপি মহাসচিব।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ দাবি

সি্লে্টের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলকারীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণেই পরিস্থিতি আরো জটিল এবং প্রায় ১০দিনেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি।”

‘‘ আমরা অবিলম্বে ভাইস চ্যান্সেলনসহ দায়ী সকল সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অপসারণ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ছাত্রলীগ ও পুলিশের দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। অযোগ্য, চাটুকার ও দলীয় শিক্ষকদের দায়িত্ব অর্পনের ফলে এই ধরনের অনাকাংখিত ঘটনা ঘটছে এবং উচ্চ শিক্ষা মারাত্মকভাবে অবণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”

চাঁদুপুরের প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ভুমি অধিগ্রহন বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দুর্নীতির যেসব সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘ বিষয়ট নিয়ে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অবস্থা জনগনের সামনে তুলে ধরার আহবান জানাচ্ছি।

স্থায়ী কমিটির সভায় সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার তদন্তের অভিযোগপত্র ৮৫বার পেছানোর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বছরের পর বছর তদন্ত রিপোর্ট দাখিল না করার সরকারের দুরভিসন্ধি ও ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করে মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

করোনার টীকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ৭০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে করোনা পরিস্থিতি ও টীকা প্রদানের বিষয়ে সঠিক চিত্র জনগনের সামনে প্রকাশের দাবিও জানান তিনি।