গাজীপুরে কর্মরত পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুঃ কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগে কারখানা ভাংচুর, পুলিশের ইন্সপেক্টরসহ আহত ৩

আপডেট: জুন ১৯, ২০২২
0

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কর্মরত অবস্থায় এক শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ করেছে ওই কারখানার শ্রমিকরা। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সুচিকিৎসার অভাবে তার মৃত্যু হওয়ার অভিযোগে উত্তেজিত শ্রমিকরা একই মালিকানাধীন দু’টি কারখানা ভাংচুর করেছে। এসময় শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের এক ইন্সপেক্টরসহ অন্ততঃ ৩জন আহত হয়েছে। রবিবার মহানগরীর বাসন থানাধীন যোগীতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর মহানগরীর যোগীতলা এলাকায় জনৈক আফাজের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় হেলাল মার্কেট সংলগ্ন এ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড গার্মেন্টসে সুইং শাখার আয়রন ম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন শাহ আলম (৩৩)। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার মুসুল্লি পাড়া গ্রামে। রবিবার সকালে কারখানায় কাজ করার সময় শাহ আলম অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এসময় তিনি ওই কারখানার নিজস্ব হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। কিন্তু তাকে কোন চিকিৎসা না দিয়ে কাজে যোগ দেয়ার কথা বলে ফেরত পাঠিয়ে দেয় হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স মিতু আক্তার। এর কিছুক্ষণ পর শাহ আলম আরো বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সহকর্মীরা তাকে আবারো ওই নার্সের কাছে নিয়ে যায়। এসময় নার্স মিতু আক্তার তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে জানান শাহ আলম স্ট্রোক করেছেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই শাহ আলম নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, সহকর্মীরা অসুস্থ্য শাহ আলমকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গাড়ি চাইলে কারখানা কর্তৃপক্ষ অনীহা প্রকাশ করে। পরে শ্রমিকরা অটোরিক্সায় করে তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে শাহ আলমকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এসময় কারখানা কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে শাহ আলমের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে ময়মনসিংহে পাঠিয়ে দেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ শাহ আলমকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেয় নি। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তিনি চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন।

জিএমপি’র বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান জানান, শাহ আলমের মৃত্যুর খবর কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। এসময় তারা শাহ আলমের মৃত্যুর জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে বিক্ষোভ শুরু করে। উত্তেজিত শ্রমিকরা ওই কারখানাসহ একই মালিকের পার্শ্ববর্তী টিএনজেড এ্যাপারেলস কারখানার গেইট ও দরজা জানালার কাঁচসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এসময় শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা বাইপাস সড়ক অবরোধের চেষ্টা চালালে পুলিশ বাঁধা দেয়। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর এনামুল হক সহ অন্ততঃ ৩জন আহত হয়। আহত ইন্সপেক্টর এনামুল হককে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, স্ট্রোক করে পোশাক শ্রমিক শাহ আলম মারা গেছেন বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তার ভাইয়ের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
###