`জীবিত না হলেও আমার স্বামীর কঙ্কালটা অন্তত ফিরিয়ে দিন ‘

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২
0

কাঁচপুরের আ’লীগ নেতা ইসমাইল অপহরণের ৮ বছর

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : আলোচিত সাত খুনের প্রধান আসামি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেন ও র‌্যাবের বহিস্কৃত অধিনায়ক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তারেক সাঈদকে দুই কোটি টাকা দিতে না পারায় সাত খুনের মাত্র ২ মাস আগে আওয়ামী লীগ নেতা ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনকে অপহরণের আট বছর পরও ইসমাইলের পরিবার এখনো অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। ২০১৪ সালে এই দিনে অর্থাৎ ৭ ফেব্রয়ারি ইসমাইল হোসেন অপহৃত হয়।

স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আসায় পথ চেয়ে বসে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইলের স্ত্রী। সোমাবার (৭ ফেব্রয়ারী) এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ইসমাইলের স্ত্রী জোসনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। জীবিত না পারলে অন্তত তার মৃতদেহটা ফিরিয়ে দিন। আর যদি মৃতদেহ দিতে না পারো তার কঙ্কালটা আমাকে দাও আমি তাই নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো।’
জোসনা বেগম আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী জীবিত আছে কিনা জানিনা। তবে আমি আমার স্বামীর অপহরণকারীদের দৃষ্টামূলক বিচার চাই, কারা আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে এটা সবাই জানে।’

জেলার বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হোসেনকে অপহরণ ও গুমের ৮ বছর আজ সোমবার। এ বিষয়ে তার সাথে কথা হলে কান্নাজড়িত কন্ঠে স্ত্রী জোসনা বেগম বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, আমার স্বামীকে জীবিত অথবা মৃতদেহটাই আমাদের কাছে ফিরিয়ে দাও কিন্তু তারা আমাদের কোন কিছু দিয়েই সান্তনা দিচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘অপহরণ ও গুমের ৮ বছর কীভাবে যে পার করেছি তা আল্লাহ জানে। যাদের সন্দেহ করেছি তারা অপহরণের পর থেকে আমাকে ও আমার ছেলেকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। আমার ছেলেকে হত্যা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করেছে।’

গত ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রয়ারী) বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকা থেকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ী ইসমাইলকে অপহরণ করে। আজও ইসমাইলের অপেক্ষায় স্ত্রী সন্তানসহ তার পরিবারের লোকজন দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। একের পর এক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তেও ইসমাইলের কোন সন্ধান পায়নি তার পরিবার। বর্তমানে মামলাটি পুলিশের অপরাধ বিভাগে (সিআইডি) তদন্তনাধীন আছে। ইসমাইল অপহরণের ঘটনার সময় র‌্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক ছিলেন সাত খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত তারেক সাঈদ। তার বিরুদ্ধে মুক্তিপণ বাবদ ২ কোটি টাকা দাবির অভিযোগ তুলেছিলেন পরিবারের সদস্যরা।

বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহ মাজহারুল জানান, ‘কাঁচপুর কুতুবপুর এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী এলাকা থেকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের মুখে অপহরণ হয়। এ ঘটনায় কুতুবপুর এলাকার মোশারফ হোসেন, নাছির উদ্দিন, কাইয়ুম, মামুন, সেলিম ও কাউছারের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পূর্বশক্রতার জের ধরে তারা অপহরণ করতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। ইসমাইল হোসেন অপহরণ মামলাটি প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ তদন্ত করেছিল। পরে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে গত বছরের ৩০ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে অপহরণ হয়েছে দাবি করা হলেও আসামিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পায়নি। এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি প্রদান করেন মামলার বাদী অপহৃতের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান। নারাজি আবেদন শুনানী শেষে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’

মামলার বাদী অপহৃতের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান জানান, ‘মামলা দায়েরের কয়েকদিন পর সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামী ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের মাধ্যমে তৎকালীন সময় আদমজীনগর র‌্যাব-১১ এর সিও তারেক মোহাম্মদ সাঈদ মুক্তিপন হিসেবে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। তাদের কাছে আমার ভাই ইসমাইল রয়েছে তার প্রমাণ হিসেবে এক সোর্সকে দিয়ে একটি চিরকুট পাঠায় তারেক সাঈদ। এরপর এক কোটি টাকা নিয়ে যাওয়ায় তারা ক্ষুদ্ধ হয়। এরপর আওয়ামী লীগ নেতা ব্যবসায়ী ইসমাইলকে গত আট বছরেও জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় ফিরে পাওয়া যায়নি।’