নার্স দিবসের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা : স্বাস্থ্যখাতের মানোন্নয়নে নার্সদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো জরুরী

আপডেট: মে ৯, ২০২৩
0

আন্তর্জাতিক নার্স দিবসের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, দেশের স্বাস্থ্যখাতের মানোন্নয়নে নার্সদের শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতার বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তিগতভাবেও তাদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা খুবই জরুরী। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিকিৎসা খাতেও প্রযু্িক্তগত পরিবর্তন ঘটছে। সেজন্য নার্সদেরকেও প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ একজন রোগীকে সুস্থ্য করতে চিকিৎসকের চেয়েও নার্স কোন অংশে কম ভুমিকা পালন করেন না। নার্সরা ২৪ ঘন্টারই রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকেন।

আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উপলক্ষে আয়াত এডুকেশন ও আয়াত কলেজ অব নার্সিং এন্ড হেল্থ সায়েন্সেস এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারী ঢাকা-তে অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন আয়াত এডুকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নুসরাত আমান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের (ডিজিএনএম) মহাপরিচালক মাকসুরা নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডায়েবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

গোলটেবির বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রুহুল ক্দ্দুুস, এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ড. আরিফ মাহমুদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা মো. শফিকুল আলম চৌধুরী, আয়াত কলেজ অব নার্সিং এন্ড হেল্থ সায়েন্সেস এর অধ্যক্ষ হালিমা আক্তার, জেপিজিএসপিএইচ এর হেড অব মিডওয়াইফারি ড. শারমিন রহমান, কোয়াটার ইন্টারন্যাশনাল এর প্রোনার্স প্রকল্পের টিম লিডার সেলিনা আমিন, গ্রামীণ ক্যালোডিয়ান কলেজ অব নার্সিং এর অধ্যক্ষ নীরু শামসুন নাহার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেড কারিমা খাতুন, নিয়ানার এর ফেকাল্টি মো. শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্কয়ার নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ নাসিমা খাতুন, ইউনিক নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ তেরেজা বারৈ, মহাখালী কলেজ অব নার্সিং এর অধ্যক্ষ খোদেজা খাতুন, আয়াত এডুকেশনের সিওও ইমরান চৌধুরী, নার্সিং সুপারভাইজার হারুন অর রশিদ, আয়াত কলেজ অব নার্সিং এন্ড হেল্থ সায়েন্সেস এর উপাধ্যক্ষ এম এফ কে আল মান্নাহ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নার্স মাকসুদা খাতুন, ফাতেমা খাতুন, শুকলা বৈরাগী, রিনা খাতুন, এসিএনএইচ এর বিএসসির ছাত্র নাহিদ হাসান, ছাত্রী জান্নাতুল মিম বিথি প্রমুখ।

আন্তর্জাতিক নার্স দিবসে এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ।’ এ প্রচারণার মাধ্যমে মূলত সমাজের নীতিনির্ধারক, জনসাধারণ এবং যারা স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও অর্থায়নে ভূমিকা রাখেন তাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গিতে নার্সিং পেশার ভবিষ্যতকে আরও উজ্জ্বল ও আলোকিত করবে এবং নার্সদের অদৃশ্য থেকে অমূল্যের দিকে নিয়ে যাবে।
আয়াত এডুকেশন ও আয়াত কলেজ অব নার্সিং এন্ড হেল্থ সায়েন্সেস দিবসটিকে উদযাপন করার লক্ষ্যে সমাজের অংশীজনদের নিয়ে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে। মূলত সবার পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নার্সিং পেশার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে প্রয়োজন তাদের যথাযত মূল্যায়ন, সম্মান ও নিরাপত্তা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের (ডিজিএনএম) মহাপরিচালনক মাকসুরা নূর বলেন, একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার প্রতি নার্সদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেজন্য নার্সদেরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। স্বাগত বক্তব্যে তিনি দেশের চাহিদার তুলনায় নার্স সঙ্কটের বিষয়ে তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ডায়েবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, চিকিৎসা খাতে প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধনে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা খুবই দরকার এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের সাথে তাল মিলিয়ে নার্সদের দক্ষ করতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ একজন রোগীকে সুস্থ্য করতে চিকিৎসকের চেয়েও নার্স কোন অংশে কম ভুমিকা পালন করেন না। নার্সরা ২৪ ঘন্টারই রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকেন।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, দেশে নার্সদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই জরুরী। কেননা নার্সরা স্বাস্থ্য খাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। সেজন্য সরকার নার্সদের পদবী ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করেছে এবং নার্সিং শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কর্মক্ষেত্রে তাদের মর্যাদাপুর্ণ পরিবেশের জন্য আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা কালিকুলাম তৈরি করেছে।

আয়াত এডুকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নুসরাত আমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতের মানোন্নয়ন ও নার্সদের স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিমুলেশন ল্যাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য নার্সদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিগতভাবেও আরও দক্ষ ও অভিজ্ঞ করতে হবে।
আয়াত এডুকেশন মূলত আয়াত কলেজ অব নার্সিং এন্ড হেল্থ সায়েন্সেস, আয়াত কেয়ার, আয়াত স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও ডিগনিফাইং লাইফ (প্যালিয়েটিভ কেয়ার) প্রোগ্রাম এই চারটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। আয়াত এডুকেশন মূলত একটি সামাজিক সংস্থা যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের যুব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করা। স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, জব প্লেসমেন্ট সার্ভিস ও পলিসি এডভোকেসি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আয়াত এডুকেশন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিশে^র বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দক্ষ নার্স এর তীব্র সঙ্কট রয়েছে এবং যেখানে নার্সের তূলনায় চিকিৎসকের সংখ্যাই বেশি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী চিকিৎসক ও নার্সের আদর্শ অনুপাত হচ্ছে ১:৪। যথাযথভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য দেশে প্রতিটি চিকিৎসকের বিপরীতে চারজন নার্স থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের রয়েছে মাত্র ০.৭৪ জন নার্সের জন্য ১ জন চিকিৎসক। অর্থাৎ নার্সের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ১.৪১ গুণ বেশি। অন্যদিকে দেশের শহরাঞ্চলে প্রতি ১০,০০০ জনের জন্য ৫.৮ জন নার্স থাকলেও গ্রামাঞ্চলে সেটা রয়েছে মাত্র ০.৮ জন। এ চিত্রই বলে দেয় দেশে নার্সের তীব্র সঙ্কট রয়েছে।
এই সঙ্কটের মূল কারণ হচ্ছে, সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, অনেক সীমাবদ্ধ নীতিমালা, সাংস্কৃতিক বাধা, নার্সদের অনির্ধারিত মর্যাদা, তাদের যথাযথ মূল্যায়নের অভাব, উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার অভাব এবং সর্বোপরি নার্সিং শিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তার অভাব। সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের শিখিয়েছে স্বাস্থ্যসেবায় একটি অপরিহার্য অংশ হচ্ছে নার্স। যদিও নার্সিংকে একটি মহৎ পেশা মনে করা এবং তাদের মহান অবদানের জন্য অখ্যাত হিরোর স্বীকৃতি দেওয়ার খুব কম উদ্যোগই আমাদের সমাজে বিদ্যমান রয়েছে

প্রেস বিজ্ঞপ্তি