ভূরুঙ্গামারীতে সমলয় পদ্ধতির চাষাবাদ জনপ্রিয়

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৪
0

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে সমলয় পদ্ধতির চাষাবাদ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষিবিদদের মতে এই পদ্ধতির চাষাবাদে কৃষকের খরচ ও সময় কম লাগে। এছাড়াও রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের মাধ্যমে চারা রোপনের ফলে ধানের প্রতিটি গোছা নির্দিষ্ট ও সমান দুরত্বে থাকে আর প্রতিটি গোছায় নির্দিষ্ট পরিমান গাছের চারা থাকে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে,কৃষিকে স্মার্ট ও যান্ত্রিকরণের আওতায় নিয়ে আসতে  সরকারের কৃষি বিভাগ বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনাসহ প্রতিনিয়ত কৃষি কাজকে সহজ ও সাশ্রয়ী করতে কৃষকদের হাতের নাগালে নিয়ে আসছে আধুনিক পদ্ধতির বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জাম। এসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধানের চারা রোপণের মেশিন রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। যান্ত্রিক এই মেশিনটির মাধ্যমে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকের সময়, শ্রম ও আর্থিক খরচ কমিয়ে ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত। এতে লাভবান হবে কৃষক।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ‍্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

উপজেলার আন্ধারিঝাড় ইউনিয়নে দেড়শ বিঘা জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গত বুধবার উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম‍্যান নূরন্নবী চৌধুরী,  উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস, কূষিবিদ ড: মামুনুর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল জব্বার, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ ও ওসি রুহুল আমিন উপস্হিত থেকে সমলয় পদ্ধতির চাষাবাদের উদ্ধোধন করেন।

কৃষকরা জানান, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনায় সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষে ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে তাদের। চলতি বোরো মৌসুমে এ বছর ট্রেতে বীজতলা তৈরী, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপন করছেন। এছাড়াও ধান কর্তনও করবেন আধুনিক যন্ত্র কম্বাইন হার্ভেস্টারের মাধ্যমে। এতে খরচ কমার পাশাপাশি বাঁচবে সময় ও শ্রম।

সমলয় পদ্ধিতে ধানের চারা রোপন করেছেন কৃষক আশরাফুল, রফিকুল ও নূরল ইসলাম। তারা বলেন, আগে তাদের এক বিঘা জমিতে চারা রোপন করতে মজুরি খরচ যেতো প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। কাটতেও একই খরচ যেত। এখন যেমন খরচও অনেক কম তেমনই সময়ও খুব কম লাগে। এভাবে চাষাবাদে ফলন ভালো হলে প্রতিবছরই সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষ করবেন তারা।  

রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের চালক ফরিদুল ইসলাম ফরিদ  বলেন, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে আমাকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়েছে। যেখানে এক বিঘা জমিতে চারা রোপন করতে ৫-৬জন লোকের একদিন সময় লাগে সেখানে মেশিনের মাধ্যমে একজন লোক দিনে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমিতে চারা রোপন করা যায়। অপরদিকে এক বিঘা জমিতে চারা রোপনে খরচ হয় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা সেখানে মেশিনের মাধ্যমে চারা রোপনে বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা।এতে কৃষকের খরচ অনেকটা কম হচ্ছে।

আন্ধাঝাড় ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হক বাদল বলেন, কৃষককে উদ্ধুব্ধকরণের মাধ্যমে আমরা ট্রেতে বীজতলা তৈরি করি সমলয়ে চাষাবাদের লক্ষ্যে আর এখন আমরা রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ধান রোপন করছি। এতে কৃষকের খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি তারা আর্থিকভবে লাভবান হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল জব্বার বলেন, কৃষিকে স্মার্ট ও  যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে আমরা সমলয়ে চাষাবাদের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক মাঠ দিবসের মাধ‍্যমে অবহিত করে তাদেরকে উদ্ধুদ্ধ করেছি। এর ফলে উপজেলায় এ বছর সমলয়ে বোরো চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। আমরা কৃষকদেরকে সঠিক পরাপর্শ ও দিক নির্দেশনা দিচ্ছি। সবসময় তাদের পাশে থাকছি যাতে কৃষকদের ব্যয় কমে তাদের চাষকৃত ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়। কৃষকরা লাভবান হলে আমাদের দেশও এগিয়ে যাবে।