রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলার পূর্ণ অধিকার আছে আসিফ নজরুলের: শিক্ষক নেটওয়ার্ক

আপডেট: আগস্ট ২১, ২০২১
0

একজন নাগরিক হিসেবে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলার পূর্ণ অধিকার অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের আছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত মঙ্গলবার তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেন ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে’।

আসিফ নজরুলের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স অ্যানেক্স ভবনে গিয়ে তার তালাবদ্ধ কক্ষে আরও তিনটি তালা লাগিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, এই শিক্ষকের কক্ষের দরজার সামনে ‘দেশদ্রোহী’, ‘জঙ্গিবাদের মদদদাতা’ ও ‘জামাত-শিবিরের এজেন্ট’ লেখা পোস্টারও সাঁটিয়ে দিয়ে আসে। এরপর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আসিফ নজরুলের কুশপুত্তলিকা পোড়ায় এবং তার গ্রেপ্তার দাবি করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা।

এতে উল্লেখ করা হয়, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক হিসেবে আসিফ নজরুলের পূর্ণ অধিকার আছে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্বন্ধে মন্তব্য করার। শুধু তাই নয়, তার এই এক লাইনের মন্তব্যে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের নাম পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু পোস্টের বক্তব্য মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় হলো- একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি কী পরিমাণ অরাজক অবস্থায় গেলে ফেসবুকে এক লাইনের একটি পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় কিছু ছাত্র এসে এরকম চরম অশোভন আচরণ একজন শিক্ষকের প্রতি দেখাতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দুই বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেকজন শিক্ষিকাকে আবাসিক হলের একটি ঘটনায় ছাত্রলীগের কিছু ছাত্রী শারীরিকভাবে নাজেহাল করে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানোর মধ্যে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এসব ছাত্র সংগঠনের এমন কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে। এরকম একটি ন্যক্কারজনক ঘটনার দুই দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও প্রশাসনের বক্তব্য দায়সারা। আর শিক্ষক সমিতি, যাদের মূল কাজ হচ্ছে শিক্ষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা, তারাও রহস্যজনকভাবে প্রশাসনের মতোই নিশ্চুপ আছে। এই আচরণ অবশ্য নতুন কিছু নয়। প্রশাসন এবং শিক্ষক নেতৃত্বের এই নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে এসব ছাত্র সংগঠনগুলো দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামক সংগঠনের ছাত্রদের এই ধরনের গুণ্ডামিপূর্ণ কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একইসঙ্গে এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত এবং দোষী ছাত্রদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে তারা।

এতে আরও জানানো হয়, আমরা দেখেছি খুব অল্প দিনের ব্যবধানে আরও শিক্ষকদের ওপর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগ, আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জনের বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্ম অবমাননার অভিযোগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সুজিত সরকারের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যের পিতাকে রাজাকার হিসেবে গবেষণাকর্মে উল্লেখ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এ ধরনের প্রতিটি ঘটনা ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার কণ্ঠরোধকারী হিসাবে নিন্দাযোগ্য।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক সব আইন বাতিল হোক। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করার সংস্কৃতি নিপাত যাক।