শ্রাবণধারার গুঞ্জরণ পড়ুক ঝরে

আপডেট: আগস্ট ১৩, ২০২৩
0
rain in bangladesh

শ্রাবণের শেষ দিন। প্রতি বছর এমনি করে ঘুরে ঘুরে আসে বাংলা মাসগুলো, আবার চলেও যায়। প্রতিটি বাঙালির জীবনে আষাঢ়-শ্রাবণ মানেই বর্ষণমুখর রাত আর দিন। বর্ষণমুখর আজকের এই দিন নিয়ে রবি ঠাকুরের কবিতায় ——–

যায় দিন, শ্রাবণদিন যায়।

আঁধারিল মন মোর আশঙ্কায়,

মিলনের বৃথা প্রত্যাশায় মায়াবিনী এই সন্ধ্যা ছলিছে॥

আসন্ন নির্জন রাতি, হায়, মম পথ-চাওয়া বাতি

ব্যাকুলিছে শূন্যেরে কোন্‌ প্রশ্নে॥

দিকে দিকে কোথাও নাহি সাড়া,

ফিরে খ্যাপা হাওয়া গৃহছাড়া।

নিবিড়-তমিস্র-বিলুপ্ত-আশা ব্যথিতা যামিনী খোঁজে ভাষা–

প্রকৃতিতে চলছে এখন শ্রাবণধারার গুঞ্জরণ। যে গুঞ্জরণের কান্কোয় ডুবে আছে আবহমান বাংলার ঝাপসা মুখচ্ছবি। এস্রাজের সুরলহরি ছড়িয়ে দিয়ে শ্রাবণসিক্ত সমিরণ নির্জন কিশোরীর মতো পাশ ফিরে বসে আছে বারান্দার গ্রিলে কপোল ঠেকিয়ে। এই হলো বাংলার চিরন্তন রূপোচ্ছবি।

শ্রাবনের শেষ দিনেও দাঁড়িয়েছে অবিশ্রাম বাদলঝরা দেবদারু উঠোনের আবছা ব্যালকনিতে। বৃষ্টির ডোরবেল বাজিয়ে বর্ষার নৈসর্গিক আগমনে সংবাদটি দিয়ে দেয় রেশমীজ্বলা কদম, কেয়া কেতকী, কামিনী, সাদা গন্ধরাজ, জুঁই, বেলী, হাস্নাহেনা প্রভৃতি ফুলের সৌরভ। বর্ষার নিবিড় গুঞ্জরণে চঞ্চল হয়ে ওঠে মন। উদাস ভাবনায় ডুবে যায় সত্তার স্পন্দন। খিড়কিজাগা ভোরের ইসারায় যখন বর্ষণের আবছায়া মুখটুকু জেগে ওঠে, মনে হয় বর্ষার এই রূপ, বাদল দিনের এই ছবিটি এই বাংলারই আদি প্রতিচ্ছবি। যার মর্মে প্রকৃতির আবহমানতা এক অনন্য আবেশে লালিত হচ্ছে পৃথিবী সৃষ্টির সূচনাকাল থেকে।
আষাঢ় ও শ্রাবণ এ দুই মাস বর্ষাকাল হলেও প্রকৃতপক্ষে চৈত্রসংক্রান্তির রেলব্রিজ পেরোতে পেরোতে বর্ষণজ্বলা ট্রেনটি এসে থামে বৈশাখের ধুলোজমা ধূসর জংশনে। ইসটিশনের লাল ঝাউফুল ফোটা ঝকঝকে টিনের চালে যেন হঠাৎই বর্ষার গুঞ্জন জেগে ওঠে। বর্ষা শুধু বৃষ্টি বা বর্ষণ নয়। বর্ষা এই রূপসী বাংলার নদী, খাল, বিল, হাওর, বাঁওড়, শস্যক্ষেতের আকণ্ঠ উর্বরতার জন্যও রাখে এক অনশ্বর অবদান।

স্রষ্টার অনুপম এই ঋতুবৈচিত্র্য ছন্দের গ্রন্থিতে জীবন যেমন প্রবাহিত হয় তেমনি এক অদৃশ্য অসীম প্রাকৃতিক ধারার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয় প্রকৃতি। যে প্রকৃতি থেকে মানুষ পায় বাঁচার উপাদান। পাহাড়, পর্বত, বন, অরণ্য, নদী, সমুদ্র সব কিছু প্রকৃতির এক অমোঘ প্রাসঙ্গিক বিষয়।

আর ওই প্রাসঙ্গিকতার ছই নৌকোর গলুইয়ের চঞ্চুতে ছুঁয়ে যায় স্বচ্ছ জলের অবয়ব ফোটা সংবেদনশীল মৃদু তরঙ্গের সিম্ফনি। বর্ষা যেমন প্রকৃতিকে সতেজ আর সজীব করে তোলে। তেমনি আটপৌরে গৃহস্থালি জীবনেও বর্ষার প্রভাব কম নয়।

বর্ষা ঋতু কাব্যময়, প্রেমময়। বর্ষা কবিদের ঋতু, কবিতা-গানের ঋতু, আবেগের ঋতু, প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাবার আকাক্ষার ঋতু। ‘বর্ষণমুখর সন্ধ্যা বা বৃষ্টিভেজা রাত আমার দেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও কি মিলবে? শীতপ্রধান দেশে বা পৃথিবীর অন্য দেশের কবিরা বর্ষার সঙ্গে পরিচিতই না। তাই বর্ষার কদরও তারা জানেন না। যেমন আমাদের বাঙালি কবিরা বর্ষায় কাব্য রচনায় নিমগ্ন থেকেছেন। তাই তো কবিগুরু বলেছেন—‘এমন দিন তারে বলা যায়/ এমন ঘনঘোর বরিষায়।’

লেখা : ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত