সংবাদ সন্মেলনে ব্যবসায়ীর দাবি, পুলিশের প্রতিহিংসায় ১৪ মামলা ৫ জিডি

আপডেট: নভেম্বর ২২, ২০২১
0


প্রতারিতরা বললো, ব্যবসায়ী খাইরুল আজাদ মিল্টনই প্রতারক!

নিজম্ব প্রতিবেদক
খলিলুল্লাহ আজাদ ওরফে খাইরুল আজাদ মিল্টন (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ী ব্যক্তি ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনী হলে সংবাদ সন্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে’ দিনাজপুর জেলা পুলিশ তার বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা দায়ের করেছে।

যদিও তার বিরুদ্ধে দিনাজপুর জেলার কোতোয়ালি থানা ও খানসামা থানায় মামলাগুলো দায়ের করে বিভিন্ন ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে মামলার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে এসব মামলার কোনও সত্যতা নেই বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তিনি।

রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন খাইরুল আজাদ মিল্টন নামের এক ব্যবসায়ী।

করোনাকালে খানসামা থানার বর্তমান ওসি কামাল হোসেন দিনাজপুরে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ত্রাণ তহবিলে ৫ লাখ টাকা অনুদান চান বলে অভিযোগ করেন তিনি। টাকা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে মামলাগুলো করা হয় বলে দাবি তার।

তবে পুলিশ কর্মকর্তা ওসি কামাল হোসেন কবে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলেন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও তারিখ জানাতে পারেননি সংবাদ সম্মেলনে।
এছাড়া অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি দিনাজপুরের পুলিশ পরিদর্শক রোকনুজ্জামান কর্তৃক তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলার কোনও সত্যতা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে পুলিশ কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রোকনুজ্জামান বলেন, তদন্তে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পরবর্তীতে খাইরুল আজাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আমরা যখন বাংলাদেশ ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটে চিঠি লিখি, ওখান থেকে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনের প্রকৃতি এবং আমাদের অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে যে ধরনের তথ্য উপাত্ত পেয়েছি তার ভিত্তিতেই এজাহার দায়ের করা হয়।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, যেকোনও ভুক্তভোগী কোনও ধরনের প্রতারণা কিংবা হুমকি বা হত্যাকাণ্ডের হুমকি পেয়ে থানায় এলে আমরা ভুক্তভোগীর বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করে সাধারণ ডায়েরি কিংবা মামলা নিয়ে থাকি। এখন পর্যন্ত প্রতারণা ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রতারক খাইরুল আজাদ মিল্টনের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা এবং পাঁচটি সাধারণ ডায়েরি করেছে ভুক্তভোগীরা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একটি গাড়ি চুরির মামলা এবং মানি লন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে।

জানা যায়, দিনাজপুর জেলার খানসামা থানার গোবিন্দপুরের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন প্রতারণামূলক অর্থ আত্মসাৎ এবং ভয়-ভীতি প্রদানের অপরাধে খানসামা থানায় ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী ফরহাদ হোসেন বলেন, খানসামা বাজারের দক্ষিণে কাশিপুর বালুরঘাটের ডাক পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২ লাখ ৭০ টাকা দেই খাইরুল হাসান মিল্টনকে। কাজ পাইয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় টাকা চাইতে গেলে আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। টাকা না পেয়ে এবং যেহেতু হত্যার হুমকি দিয়েছে সেহেতু মামলা করি।

২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি দিনাজপুরের খানসামা থানায় প্রতারণা এবং হুমকি জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন রাজমিস্ত্রি আশিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, খলিলুল্লাহ আজাদ ওরফে খাইরুল আজাদ মিল্টন বিভিন্ন সরকারি বিল্ডিং মেরামতের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা নেয়। কাজ না পেয়ে তার কাছ থেকে টাকা চাইতে গেলে তিনি আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। সে একজন প্রতারক।
দিনাজপুরের খানসামা থানায় ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রতারণা ভয়-ভীতি হুমকির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন বুলবুল রহমান। তিনি বলেন, আউটসোর্সিং-এ চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেয় খাইরুল আজাদ মিল্টন। চাকরি দিতে না পারায় সেই টাকা চাইতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। টাকা ফিরে পেতে আমি থানায় মামলা দায়ের করি।
এ ব্যাপারে খাইরুল আজাদ মিল্টন বলেন,মামলাগুলোকে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবী করেন খাইরুল আজাদ মিল্টন। ২০২০ সালের ২১ জুলাই দিনাজপুর খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহমেদ মাহবুব উল ইসলাম স্বাক্ষরিত রাজাকারদের একটি নামের তালিকায় ৯ নম্বরে দেখা যায় খাইরুল আজাদ মিল্টনের বাবার নাম।

তার বাবার নাম হাবিবুল্ল্যাহ ও তার দাদার নাম মৃত ডাক্তার আব্দুল খালেক। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কোনও মন্তব্য না করে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে চলে যান তিনি।