সময় শেষ , এবার সুবোধ বালক-বালিকার মতো পদত্যাগ করেন—- মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২৩
0

আজাদ ভূইঁয়া , নোয়াখালী :

সরকারের ‘সময় শেষ’ উল্লেখ করে তাদেরকে ‘ভালো ছেলের মতো, সুবোধ বালক-বালিকার মতো’ পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার বিকালে জেলার শহীদ বুলু স্টেডিয়ামে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ আর কোনো সময় নাই। ওদের সময় শেষ। পরিস্কার করে বলেছি, আবারও বলছি… ভালো ছেলের মতো, সুবোধ বালক-বালিকার মতো পদত্যাগ করেন, সংসদ ভেঙে দেন এবং একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে নির্বাচন করার জন্য নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেন।”

‘‘ একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগনের প্রতিনিধিদের নিয়ে সাচ্চা প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা পার্লামেন্ট তৈরি হবে তারা দেশ চালাবে।”

সরকার পদত্যাগ না করলে আন্দোলনে রাজপথেই ফয়সালা হবে উল্লেখ করে শ্লোগান তুলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘‘ আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, ‘ফয়সালা হবে কোথায়?’ ‘টেক ব্যাক?’

স্টেডিয়ামে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমস্বরে জবাব দেয় ‘রাজপথে রাজপথে’, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’।।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দফা এক দাবি এক সেটা কি?’’

নেতা-কর্মীরা সমস্বরে বলেন, ‘‘ শেখ হাসিনার পদত্যাগ।”

সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

ফখরুল বলেন, ‘‘ এখন সময় এসেছে আমাদের সঙ্গে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শুধু বিএনপি বা কৃষক দল, শ্রমিক দল, মতস্যজীবী দল, তাঁতী দল, জাসাসের নেতা-কর্মীরা নয়, যুব দল-স্বেচ্ছাসেবক দল-ছাত্র দলের নেতা কর্মীরা শুধূ নয় সকল মানুষকে আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

‘‘ এই সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, এ সমস্যা শুধু খালেদা জিয়ার নয়, এই সমস্য শুধু তারেক রহমানের নয়, এই সমস্যা আমাদের সমগ্র জাতির। ভোটের অধিকার নেই, আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন, আমাদের অর্থনীতি ধবংসপ্রাপ্ত হয়েছে।”

দুপুর আড়াইটায় বিএনপির অঙ্গসংগঠন কৃষক দল, শ্রমিক দল, মতস্যজীবী দল, তাঁতী দল ও জাসাসের যৌ্থ উদ্যোগে পদযাত্রাপূর্ব এই সমাবেশ হয়। পদযাত্রাটি শহরে সড়ক প্রদক্ষিন করে লাকসাম সড়কের কাছে এসে শেষ হয়।

সারাদেশের ছয় জেলা শহরে এই পাঁচ সংগঠন পদযাত্রার যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এটি তার প্রথমটি।


‘ উনি(ওবায়দুল কাদের) ভালো মানুষ, কী আললাদ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপনাদের সন্তান খুব ভালো মানুষ।’’

এ সময়ে সমাবেশের কর্মীরা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘কাওয়া কাওয়া’ শ্লোগান দিতে থাকলে তিনি সকলকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘ থামেন।

তিনি(ওবায়দুল কাদের) কালকে বলেছেন যে, আমরা দাবি করেছি একদফা এক দাবি হাসিনা তুই কবে যাবি… তাই না। আমরা বলেছি যে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না। আমাদের পরিস্কার ঘোষণা।”

‘‘ আর উনি বলেছে কি? উনাদের একটাই দাবি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হতে হবে। কী লজ্জা কী লজ্জা কী আললাদ, কী আবদার। ২০০৮ সালে কারচুপি করে ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালে সকলকে বোকা বানিয়ে,বিচার ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে, খায়রুল হকের(ততকালীন প্রধান বিচারপতি) ভেতর দিয়ে পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটাকে বাতিল করে দিলেন। কি করলেন আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। কেনো? যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে নিরপেক্ষ সরকার থাকলে নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নাই…।”

‘খালেদা: গর্ব মোদের আলাদা’

বৃহত্তর নোয়াখালীর সন্তান বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতন ও কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট একটা স্যাঁত-স্যাতে ঘরে আটক করে রাখার কথা উল্লেখ বলেন, ‘‘এখনো গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন তিনি আপনাদেরই বৃহত্তর নোয়াখালীর সন্তান তাই না।”

‘‘ আমি একবার আসছিলাম দেশনেত্রীর সঙ্গে। একটা শ্লোগান শুনেছিলাম, শ্লোগান শুনে আনন্দে গর্বে আমার বুক ভরে গিয়েছিলো। সেই শ্লোগান কি ছিলো? ‘গর্ব মোদের আলাদা, নেত্রী মোদের খালেদা’। আজকে তিনি গৃহবন্দি, চিকিতসার জন্য তাকে বাইরে যেতে দেয় না। আমাদের নেতা তারেক রহমান তরুনদের নেতা যার দিকে সারা বাংলাদেশ তাঁকিয়ে আছে তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই নেতাকে নির্বাসিত করে রেখেছেন একটার পর একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চায়। আমরা করুনা চাই না। আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে বিদেশে দেখতে চাই না।”

‘‘ আমরা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় দেখতে চাই না, তাকে বাইরে দেখতে চাই, নোয়াখালীতে দেখতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা যেটা আমাদের ভোটটা আমরা নিজেরা দিতে চাই। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো…এই নির্বাচন আমরা চাই।”

‘অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এই যারা অত্যাচার করছেন, নির্যাতন করছেন, আজকে লাকসামে যারে নির্যাতন করেছেন, অন্য জায়গায় যারা নির্যাতন করেছেন তারা সাবধান হয়ে যান। আর কোনো রকমের নিপীড়ন–নির্যাতন আমরা সহ্য করব না।”

‘‘ প্রশাসনকে বলে দিতে চাই, আপনারা নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করবেন সংবিধান অনুযায়ী। কোথাও কোনো নির্যাতন করবেন না। জনগনের বিজয় অনিবার্য। এবার নতুন সূরয উদয় হবে ইনশাল্লাহ।”

আগামীতে নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র মেরামতের ঘোষিত ৩১ দফার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ সেখানে পরিস্কার করে বলেছি, আমরা কৃষকদের জন্য উন্নতির ব্যবস্থা করব, আমরা শ্রমিকদের জন্য উন্নতির ব্যবস্থা করব, আমরা তাঁতী, মতস্যজীবী, কামার-যুবক-শ্রমজীবী মানুষের জন্য যা যা করব তা এই রুপরেখায় বলেছি।”

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদের যৌথ সঞ্চালনায় পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, মনিরুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মাহবুবে রহমান শামীম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রেহানা আখতার রানু, মোস্তাক মিয়া, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকনসহ জেলা নেতারা বক্তব্য রাখেন।