সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী একসাথে যুবদের কার্যক্রম

আপডেট: মার্চ ৭, ২০২২
0

সহিংসতার ভয় রুদ্ধ করে দেয় নারীদের, বিশেষ করে যুব নারীদের সম্ভাবনা, তাদের এগিয়ে চলার পথ। এই সহিংসতার ভয়কে রুখে দিতে তরুণদের মধ্যে নেতৃত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী কার্যক্রম এবং প্রচারণা অভিযান। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশী উন্নয়ন সংস্থা জাগো ফাউন্ডেশন একসাথে যুবদের একত্রিত করছে “সহিংসতার ভয় আর নয়” শীর্ষক এই অভিযানে।

সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আওয়াজ তুললেও সহিংসতার ভয় এবং এই ভয়ের প্রভাব নিয়ে কথা বলা হয় সামান্যই। অথচ যুবদের, বিশেষ করে যুব নারীদের জীবনে এই ভয়ের রয়েছে ভয়াবহ প্রভাব। আর তাই প্রথমবারের মত সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে একত্রিত হবে সারাদেশের যুবরা, নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে।

আজ সোমবার প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর ঢাকাস্থ কান্ট্রি অফিসে দুই সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় এই প্রচারণা অভিযানের।

আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন- প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর গার্লস রাইটস ডিরেক্টর কাশফিয়া ফিরোজ, ক্যাম্পেইন ম্যানেজার সেমন্তি মঞ্জরী, জাগো ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা করভি রাখসান্দ, সহকারী পরিচালক এশা ফারুকী।

আলোচনায় কাশফিয়া ফিরোজ জানান, সহিংসতার এই ভয় শুধু কিশোর-কিশোরীদের জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়। আর তাই, সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরুর প্রাক্কালে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ দেশের সকল বিভাগ থেকে পারিবারিক বলয়ে, রাস্তায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অনলাইনে-সহ বিভিন্ন পরিমণ্ডলে ‘সহিংসতার ভয়’ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। প্রায় ১২ হাজার অংশগ্রহণকারীর উপর জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গণপরিসরে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হয়। ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী ও কিশোরী জানান তারা নিজ পরিবারেই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক, সিনিয়র স্টুডেন্ট দ্বারা বিভিন্ন বিরূপ ও অশালীন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন বলে দাবী করেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হওয়ার কথা জানান অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ, আর কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের ৫৬ শতাংশ। যা তাদের মনে দীর্ঘমেয়াদি ভয় সঞ্চার করে। জরিপ হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারি, ভয়ের কারণে অনেক সময় বাবা-মায়েরা মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, খেলাধুলা, পিকনিকে অংশগ্রহণ করতে দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। সহিংসতার ভয়ের এই বলয়কেই আমরা আমাদের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ভাংতে চাই।

করভি রাখসান্দ বলেন, আগ্রাসন কিংবা জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ভয় নারীর জীবনকে সীমাবদ্ধ করে তোলে। আমরা চাই সমাজের প্রতিটা জায়গা, প্রতিটা স্তর হবে সকল মানুষের জন্য নিরাপদ।

শুরুতেই ঢাকা, রংপুর, বরিশাল এবং কক্সবাজার থেকে নির্বাচিত ২০ জন যুব গ্রহণ করবেন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, যেন তারা নিজ নিজ কমিউনিটিতে গিয়ে তাদের কমিউনিটির তরুণদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে গণপ্রচারণা অভিযান।

পুরো ক্যাম্পেইনটি শেষ হবে একটি জাতীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে- যেখানে যুবদের মধ্য থেকেই উঠে আসবে সহিংসতার ভয় বিষয়ক চ্যালেঞ্জের গল্প এবং তা মোকাবেলার পথ।

দেশের উন্নয়নে একদিকে যেমন কন্যাশিশু ও যুবনারীদের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, অন্যদিকে তারাই হচ্ছে সহিংসতার শিকার। বাঁধা পড়ছে সহিংসতার ভয়ের শেকলে।

এই সহিংসতার ভয়ের বিরুদ্ধে এডভোকেসির মাধ্যমে আগামী দশ বছর কাজ করার দেশীয় কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। সেই প্রেক্ষিতেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২ কে সামনে রেখে এই দেশব্যাপী কার্যক্রমের আয়োজন।

নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য উদযাপনের উদ্দেশ্যে নানা আয়োজনে পালিত হয় এই দিনটি। নারীদের অধিকার অর্জন উদযাপন এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইকে সমর্থনের জন্য পালিত এই দিনটিকে নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে থাকে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।

এই বছরের বৈশ্বিক ও জাতীয় প্রতিপাদ্যঃ “টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য”। (Gendar equality today for a sustainable tomorrow)। এবং বৈশ্বিক ক্যাম্পেইন থিম হচ্ছে, ব্রেক দ্য বায়াস (Break the Bias).

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বৈশ্বিক ক্যাম্পেইন এর সাথে মিল রেখে “বাঁধা পড়তে নয়, ভাংতে এসেছি” ট্যাগলাইন নিয়ে পালন করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২২। চলবে মাসব্যাপী নানা কার্যক্রম।