সহিংসতায় নিহত ১ : গোলাপগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী যারা

আপডেট: ডিসেম্বর ২৭, ২০২১
0

গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি: চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রোববার সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১০টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ন হলেও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউ‌নিয়‌নে দুটি ভোটকেন্দ্রের উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে বৈটিকর এলাকায় পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে আব্দুস সালাম নামের একজন আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

এসব ইউপিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। স্থানীয়ভাবে পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী, ৪টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি ৬টির মধ্যে ২টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, ১টিতে জাতীয় পার্টি (স্বতন্ত্র), ২টিতে জামায়াত নেতা (স্বতন্ত্র) ও ১টি বিএনপি নেতা (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন।

বেসরকারি ফলাফলে জানা গেছে, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১নং বাঘা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা) আব্দুস সামাদ ৪৭৭৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন । তার নিকটতম প্রতিদ্বদ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস প্রতীক) আব্দুল কাদির বাবুল (আনারস প্রতীক) পেয়েছেন ৩৬৭৪ ভোট।

২নং সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) তজম্মুল আলী তোতা মিয়া ৩৫৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (মটরসাইকেল প্রতীক) পেয়েছেন ৩১৩৪ ভোট।

৩নং ফুলবাড়ি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) আব্দুল হানিফ খান ৫০৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (চশমা প্রতীক) পেয়েছেন ৩৬৮২ ভোট।

৪নং লক্ষিপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (আনারস প্রতীক) মাহতাব উদ্দিন জেবুল ৫৪৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সতন্ত্র প্রার্থী (মোটরসাইকেল প্রতীক) আব্দুল আলিম তুহিন পেয়েছেন ৫৩৬১ ভোট।

৬নং ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে জামাত মনোনীত (ঘোড়া প্রতীক) আব্দুর রহিম ৬২৪৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিএনজি অটোরিকশা প্রতীকের নোমান উদ্দিন মুরাদ পেয়েছেন ৫৭০০ ভোট।

৭নং লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টি মনোনীত (লাঙল প্রতীক) খলকুর রহমান খলকু ৯০৩২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঘোড়া প্রতীক) অজি মোহাম্মদ কাওছার পেয়েছেন ৭২২৬ ভোট।

৮নং ভাদেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত (ঘোড়া প্রতীক) শামিম আহমদ ১১৮৪৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোনীত (নৌকা প্রতীক) সেলিম উদ্দিন পেয়েছেন ৬০৮৮ ভোট।

৯নং আমুড়া ইউনিয়নের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত (নৌকা প্রতীক) সৈয়দ হাসিন আহমদ মিন্টু ২২২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (সিএনজি অটোরিকশা প্রতীক) রুহেল আহমদ পেয়েছেন ২১২১ ভোট।

১০ নং বাদেপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে জামাত মনোনীত প্রার্থী (আনারস প্রতীক) জাহিদ হোসাইন ৪৬৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোনীত (নৌকা প্রতীক) মোস্তাক আহমদ পেয়েছেন ৩২৫১ ভোট।

১১ নং শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (ঘোড়া প্রতীক) এম কবির উদ্দিন ৩০৯০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব্দ্বী জামাত মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান (মটরসাইকেল প্রতীক) পেয়েছেন ৩০২৪ ভোট।

ভোট চলাকালীন উপজেলার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। এসব কেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষণীয় ছিল।

তবে উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বিশৃংখলার ঘটনা ঘটে। এসময় ব্যালট পেপার ছিনতাই, সাংবা‌দিক লা‌ঞ্চিত, মাছরাঙা ও এন‌টি‌ভির ক্যা‌মেরা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে এবং নৌকার প্রার্থী সেলিম উদ্দিনের সমর্থকদের হাতে সাংবাদিকরাও লাঞ্চিত হন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সাংবাদিকদের ক্যামেরা উদ্ধার করা হয় । এই ঘটনার পর প্রায় আধাঘন্টা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত তাকে। এরপর ৪টার পর আরো আধাঘন্টা ভোটগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়।

এদিকে ভোট গ্রহণ শেষে নির্বাচনী সহিসংতায় পুলিশের সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক সাইকেল মেকানিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এ সংঘর্ষে ৮/১০ পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বৈটিকর বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে৷ নিহত সাইকেল মেকানিকের নাম আব্দুস সালাম (৪০)। সে লক্ষিপাশা ইউপির রামপা দক্ষিণ ভাগ এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাত ৮টার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউ‌নিয়‌নে দুটি ভোটকেন্দ্রের উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে বৈটিকর এলাকায় পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় পুলিশ সহ কয়েকজন এলাকাবাসী আহত হন। এসময় আব্দুস সালাম নামের একজন আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তিনি কিভাবে মৃত করেছেন তা সঠিক কেউ বলতে পারেনি।

নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জসিম উদ্দিন বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন।

এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা ওসি মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে তুমুল সংঘর্ষ বাধে৷ পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি নিক্ষেপ করে৷” তিনি জানান, সংঘর্ষকালে আব্দুস সালাম আহত হন৷ তার বুক ও পেটে ছররা গুলির চিহ্ন দেখা গেছে৷ পরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷