হারিয়ে যেতে বসেছে খোকসার তাঁতপল্লী

আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২১
0

কুষ্টিয়া,১৭-১১-২০২১ :

এক সময় যে পল্লী ছিল আনন্দমূখর, গ্রামগুলোর ভিতর দিয়ে হেঁটে গেলে শোনা যেত তাঁতকলের খট খট শব্দ। সেই খট খট শব্দের তালে কারীগরদের কণ্ঠে শোনা যেত জারি সারি ভাটিয়ালী গান। সে তাঁতপল্লীর গ্রামগুলো আজ নীরব। অধিকাংশ তাঁতকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারীগরদের পরিবারগুলোতে অভাব হয়েছে নিত্যসঙ্গী।

প্রয়োজনীয় মুলধন, কাচাঁমালের মূল্য বৃদ্ধি, প্রশাসনিক জটিলতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেক তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে পড়ার কারণে শ্রমিক ও মালিকরা তাদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়াও চরম অর্থ সংকট ও সহজ শর্তে ঋন না পাওয়ার কারণে তাঁত শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। কুষ্টিয়ার খোকসাতে এক দশক আগে প্রায় হাজার খানিক তাঁত কল সচল থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৫০ টির মতো।

জানা গেছে, তাঁতী পাড়ায় তাঁতের তৈরী লুঙ্গি, শাড়ী, গামছা তৈরী হতো। এখন বেশির ভাগ এলাকায় তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে ফলে তাঁত শ্রমিকরা বিভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছে। বুধবার উপজেলার পৌর এলাকার কালীবাড়ি পাড়া সড়ক দিয়ে যেতেই শোনা যাচ্ছিল তাঁতের খট খট শব্দ। বাপ-দাদার আমলের পেশা ধরে রেখেছে এ এলাকার কয়েকজন তাঁতী। কালীবাড়ি পাড়া এলাকার মোঃ ইসামত আলী বলেন, কাপড়ের দামের চেয়ে সুতার দাম বেশি হওয়ায় তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। এক থানে ৪ পিছ লুঙ্গি হয়, এতে ব্যয় হয় ৫শ টাকা আর বিক্রি হয় ৬শ ৩০ টাকা। তাও কুমারখালী থেকে সুতা আমদানী করে তৈরী করার পর আবারও কাপড় কুমারখালীতে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। এতে শ্রমিকের বেতন, যাতায়াতসহ আনুসাঙ্গিক খরচ পোষাতে পারি না। শুধু বাপ-দাদার ঐতিয্য রক্ষার্থে শ্রমিক বাদ রেখে আমরা পরিবারের ৫ জন সদস্য শ্রম দেই। আরেক তাতী তুহিন বলেন, উপজেলার তাঁত শিল্পের মধ্যে সবই প্রায় বিলুপ্তির পথে।

আমরা এখন তাঁত শিল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছি। বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অর্থাভাবে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা বন্ধের পথে। তাই এ তাঁত শিল্প বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। অনেক তাঁতী এ শিল্প বাদ দিয়ে কৃষি ও অন্যান্য কাজে যোগ দিচ্ছে।

সরকার যদি নতুন উদ্যোগে আমাদের পাশে এসে দাড়ায় তাহলে বাপ-দাদার গড়ে তোলা এ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।তাঁতী জুলমত আলী বলেন, কাঁচামাল তুত, সাগু, আতপ চাউল, সোহাগা, রং, সুতাসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেলেও কাপড়ের দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে ৫ টি তাঁত কারখানার মধ্যে সচল রেখেছি মাত্র একটি। অর্থাভাবে এটিও বন্ধ করে দিতে হতে পারে।