১৬ই জুন কালো দিবস : ডিজিটাল আইনের ছোবলে হাজারো সাংবাদিক বেকার

আপডেট: জুন ১৬, ২০২১
0

আব্দুস সবুর খান সেন্টু : ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ভাবে দেশ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে একটি সংবিধান রচনা করা হয়। এই সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকার, বাক-স্বাধীনতা, ধর্মীয়স্বাধীনতা, রাজনৈতিক দল গঠনের স্বাধীনতা সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা, জনগণের মুক্ত মনে লেখা ও বলার অধিকার সংরক্ষিত ছিলো।

১৯৭৩ সাল- ১৯৭৪ সালে তদানীন্তন শাসক দল আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনের চিত্র যখন দৈনিক সংবাদপত্রে ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় সচিত্র বিবরনী সহ প্রকাশিত হতে শুরু করে তখনই আওয়ামী শাসকদেও মধ্যে দেখা দেয় স্বৈরাচারী মনোভাব। এই অসহিষ্ণুতার কারনেই জনগনের কথা, মানুষের মৌলিক অধিকার, বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড জনগণের কাছে কোন সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সংবাদপত্র-দলনের জন্য বিভিন্ন কালাকানুন প্রনয়ন করা হয়।
দৈনিক গণকন্ঠ, সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ, সাপ্তাহিক হককথা, সাপ্তাহিক গণশক্তি, সাপ্তাহিক নয়াযুগ, সাপ্তাহিক ইংরেজি পত্রিকা হলিডে সহ অনেক পত্রিকা বিনানোটিশে রক্ষীবাহিনী দ্বারা বন্ধ করে দেয়। সেকাল জাতীয় রক্ষী বাহিনী দ্বারা রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের গুম, হত্যা নির্যাতন শাসক দলের নিত্য দিনের কর্মকান্ড ছিলো।

সেদিনের জাতীয় রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী দৈনিক সংবাদ পত্রে সচিত্র বিবরনীর জন্য বিশিষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও ভাষা সৈনিক জাতীয় নেতা অলিআহাদ, সম্পাদক ইত্তেহাদ, কবি ও সাংবাদিক আল-মাহমুদ সম্পাদক দৈনিক গণগণ্ঠ, বিশিষ্ঠ সাংবাদিক এ জেড এম এনায়েত উল্লাহ খান সম্পাদক সাপ্তাহিক হলিডে সহ অনেক সাংবাদিক ও লেখক বুদ্ধিজীবিকে গ্রেফতার করা হয়।
কবি সাহিত্যিক ডঃ হুমায়ুন কবিরকে হত্যা করাহয়। ১৯৭৫ সালে ১লা জানুয়ারী বিনাবিচারে শাসক দলের নির্দেশে কমরেড সিরাজ সিকদারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত শাসক দলের হাতে জাসদ, ন্যাপ (ভাষানী) পুর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি (সিরাজ সিকদার), পুর্ব বাংলার কমিনিস্ট পার্টি ( মাকর্সবাদ লেলিনবাদ), সাম্যবাদী দল ( তোয়াহা), ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) রাজনৈতিক দলের ৩০ হাজার নেতাকর্মীদের হত্যা ও গুম করা হয়। ১৯৭৩-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিনা বিচারে হাজার হাজার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সমগ্র বাংলাদেশের জেলখানায় আটক করে রাখা হয়।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম জাতীয় নেতা ও মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীকে টাঙ্গাইল তার নিজেস্ব বাড়িতে পুলিশ প্রহরায় গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইন করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে সংবাদপত্র বন্ধ থেকে শুরু করে সাংবাদিক ও পত্রিকার ছাপাখানার কর্মী ও প্রকাশকদেরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
এই আইন করার পর শাসক দলের অপর্কীতি ঢাকা যায়না তখনই জনগণের মৌলিক অধিকার হরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফলে সংবিধানে ৪র্থ সংশোধন করে, ১৯৭৫ সালে দেশে মাত্র একটি রাজনীতিক দল “বাকশাল” সৃষ্টি করে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও বাতিল ঘোষনা করাহয়। স্বৈরাচার সরকার কখন মানুষকে তার মৌলিক অধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেয় না। ১৯৭৫ সালের ১৬ই জুন স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ৪ টি দৈনিক পত্রিকা রেখে দেশের সমস্ত পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সেই দিন এই শাসক দলের এই কর্মকান্ডের জন্য বেকার হয়ে পরে হাজার হাজার সংবাদপত্রে নিয়োজিত সাংবাদিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা, বিজ্ঞাপন কর্মী, প্রেসকর্মী, সংবাদপত্র বিক্রেতা হকার। এই অসহনীয় স্বৈরাচার অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ৭৫ সালের ৭ই নভেম্বও সিপাহী জনতার মহান বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম। ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট জিয়া একের পর এক সংবিধানের অগণতান্ত্রিক ধারাগুলো পরির্বতন ও সংশোধন করেন। জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চ্চা শুরু করার জন্য ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক দলবিধি ১৯৭৬ জারি করেন। অন্যান্য দলের সঙ্গে আওয়ামীলীগের পুণরুজ্জীবন ঘটে।
১৯৭৫ সালে আওয়ামী সরকারের আমলে বন্ধ জাতীয় পত্রিকাগুলো প্রেসিডেন্ট জিয়া একের পর এক কাগজ ছেড়ে দিতে থাকেন। ফলে এক দলীয় স্বৈরাশাসনের পরিবর্তে দেশে চালু হয় কোটি মানুষের স্বপ্ন বহুদলীয় গণতন্ত্র। ৪টি দৈনিক সংবাদ পত্রের জায়গায় প্রকাশিত হলো শতাধিক দৈনিক ও সহস্র সাপ্তাহিক পত্রিকা। ১৯৭৫ সালে বন্ধ পত্রিকার বেকার সাংবাদিকদের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তথ্য মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকতার পেশা সহ বিভিন্ন চাকুরীতে আত্মীয়করন করা হয়।
চালু হয়, ৭৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের সকল দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো। বর্তমান শাসক দল আওয়ামীলীগ ১৯৭৩-১৯৭৫ সালের মত মানুষের বাক-স্বাধীনতা,গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার স্বাধীনতা হরণ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চালু করা হয়। বর্তমান শাসক শ্রেনী তাদের সমালোচনা কারীদেও এই কালো আইনের মাধ্যমে গ্রেফতার করে কারাগারে মাসের পর মাস আটক করে রাখা হয়।
লেখক মুস্তাক আহমেদ এই আইনের জেলখানায় প্রথম শহীদ। আজ বাংলাদেশের আইনের শাসন ভূলুন্ঠিত প্রশাসন দলীয় ভাবে সৃষ্টি, অর্থনৈতিকখাত ব্যাংক বীমা, শেয়ার বাজার চিহ্নিত রাষ্ট্রের মাফিয়া দুষ্টচক্রের হাতে পরিচালিত। ১৯৯৬-৯৮ সালে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীর মহানায়ক দ্বারা স্বাথ্য দপ্তরের ভেকসিন ক্যালেঙ্কারী হচ্ছে? ভারতীয় সেরাম ইনষ্টিটিউড টিকার অবশিষ্ঠ টিকা না পাওয়ার কারন কি ?, জনগনের প্রশ্ন কেন এক ব্যক্তি ওষুধ কোম্পানীর হাতে আমাদেও ভ্যাকসিনের টিকার ব্যবসা দেওয়া হয়।

আজ সারা বাংলাদেশের নারী সমাজ মহা-আতংকের মধ্যে দিনযাপন করছে। বাংলাদেশে আজ প্রতিদিন শত শত নারীর ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতিবাদী রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের বিনা বিচারে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ২০০৯-২১ সাল পযর্ন্ত শাসকদল দ্বারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা সাজা দেওয়া হচ্ছে।
তাই আসুন বাংলাদেশের মানুষের হৃতগৌরব, সুষ্ঠ ভোটাধিকার নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা সংগ্রামে অংশ গ্রহন করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও কারাবন্দী বিএনপি নেত্রী নিপুন রায় চৌধুরীকে মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করে জনতার আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে অংশগ্রহন করার আহবান রইলো।

লেখক : নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।

এম আর কামাল
নারায়ণগঞ্জ